মাকে হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটানো অসহায় চার শিশুর পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে শতাধিক মানুষ। তাদের আশ্বাসে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রত্যন্ত রুইয়ার কুল গ্রামের ওই শিশুদের বাবা দিনমজুর সুদাষ ব্রক্ষ্মা ঘোর অন্ধকারের মধ্যেও কিছুটা আলোর দেখা পেয়েছেন। রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে সুদাষ ব্রক্ষ্মা বিভিন্ন গনমাধ্যমে তাদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশিত হলে বলেন, গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কয়েকজন সাংবাদিক ভাই আসে।
রাত থেকেই একের পর এক ফোন আসতে থাকে। আজ সারাদিনও অনেক কল এসেছে। বাড়িতে কয়েকজন লোকও এসেছিল। কিছু টাকাও পেয়েছি। তবে আশ্বাস দিয়েছেন অনেক লোক। বিদেশ থেকেও কল দিয়ে ছেলে-মেয়েদের দায়িত্ব নিতে চেয়েছে। এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি শেয়ারের পর ২৪ ঘণ্টায় অসহায় চার শিশুর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মন্তব্য করেছেন প্রায় দুই হাজার মানুষ। অন্যদিকে এ নিয়ে প্রকাশিত ভিডিও দেখেছেন ৩৬ হাজারেরও অধিক মানুষ।
কমেন্ট বক্সে শিশুদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন শতাধিক মানুষ। পাশাপাশি নিজস্ব টাইমলাইনে এই শিশুদের ছবি পোস্টের মাধ্যমেও পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক ফজলুল বারীর ফেসবুক পোস্ট পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। বাচ্চাদের ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন- এই বাচ্চাদের আমরা দেখভাল করব। তাদের মা দেড়মাস আগে ক্যান্সারে মারা গেছেন। বাচ্চাদের বাবা দিনমজুর। বাচ্চাগুলোর রান্না খাওয়ানোর কেউ নেই। মিডিয়ার রিপোর্ট পড়ে বাগেরহাটের চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েদা ফয়জুন্নেসা বাচ্চাগুলোকে দেখতে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।
যে সব সাংবাদিক রিপোর্ট করেছেন তাদের একজন তানজীমের সঙ্গে কথা বলে নম্বর নিয়ে বাচ্চাদের বাবা সুদাষ ব্রহ্মাকে আমরা একটা প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি একজন গৃহকর্মী ঠিক করবেন। যিনি মায়ের মতো বাচ্চাগুলোকে দেখাশুনা করবেন। রান্না করবেন, খাওয়াবেন, পরাবেন। এই গৃহকর্মীর বেতন আমরা দেবো। আপাতত এটা শুরু করলে বাচ্চাদের বাবা কাজে যেতে পারবেন। বড় বাচ্চা দুটি স্কুলে যেতে পারবে। আগামীকাল আশা করি আরও ফলোআপ জানানো যাবে।
আমাদের সঙ্গে থাকুন প্রিয় দেশবাসী। অমর্ত্যকে রাখুন আপনাদের নিয়মিত প্রার্থনায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত মুখ নিউইয়র্ক প্রবাসী ফাতেমা নাজনীন প্রিসিলা ঢাকা পোস্টের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এই নিউজের কমেন্ট বক্সে লিখেছেন, আমার ভালোবাসা পৌঁছে যাবে ওদের জন্য। রুইয়ার কুল গ্রামের শেফালী মন্ডল জানান, সন্ধ্যায় খুলনা থেকে দুই ব্যক্তি এসেছিলেন। তারা সুদাষের হাতে দুই হাজার টাকা প্রদান করার পাশাপাশি ভবিষ্যতেও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে এক প্রবাসী মুঠোফোনের মাধ্যমে সহযোগিতা এবং শিশুদের দেখাশোনার জন্য গৃহকর্মী ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকটও এক ব্যক্তি কিছু টাকা দিয়েছেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে সহযোগিতার আশা পোষণ করেছেন। আশা করি শিশুরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ পাবে।
উল্লেখ্য, এক বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন সুদাষ ব্রক্ষ্মার স্ত্রী ঝর্ণা বিশ্বাস। দিনমজুর সুদাষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাই খুব একটা চিকিৎসা করাতে পারেননি স্ত্রীর। দেড়মাস আগে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যান ঝর্ণা। এরপর থেকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটতে থাকে সুদাষ ও তার চার সন্তানের। চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় সজলের বয়স ১১ বছর, এরপরে মেয়ে স্বর্ণালীর বয়স ৭ বছর, ছোট ছেলে সকালের বয়স ৩ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স ১১ মাস।
পত্রিকা একাত্তর /শেখ আবু তালেব