ঠাকুরগাঁওয়ে আগাম জাতের আলু বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা দরে। আলুর দাম কম হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।


গত বছর অধিক আলু উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবছরও লাভের আশায় আগাম আলু চাষে ঝোঁকেন আলুচাষিরা। কিন্তু এবার আগাম আলুর দাম কম থাকায় লোকসানের কবলে পড়েছেন তারা। গত বছর আলুচাষিরা প্রতি কেজি আলু মাঠেই বিক্রি করেছিলেন ২৫-২৮ টাকা দরে। এবার তা এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ১০-১২ টাকায়। ফলে উৎপাদন খরচের সঙ্গে আলুর দামের ফারাক বিস্তর।

জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধুপুর গ্রামের কৃষক রবীন রায় বলেন, গতবার যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে এবারও তেমনই আলু উৎপাদন হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সামান্য ক্ষতি হয়েছে তবে তা মানিয়ে নেওয়ার মতোই। কিন্তু গতবার আলুর দাম পেলেও এবার আলুর দাম আমাদের কপালে হাত ঠেকিয়েছে। সামনের দিনগুলো আরও ভয়াবহ হতে পারে।

বড়বাড়ী ইউনিয়নের রুপগঞ্জের গ্রামের আলু চাষি সমশের আলী জানান, ৩০ শতক জমিতে আগাম জাতের আলু চাষে ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ফলন হয়েছে ৩৭ মণ আলু, বাজার মূল্য ১৩ টাকা কেজি দরে প্রায় ২০ হাজার টাকা। তাঁর ৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।

রাণীশংকৈল ধর্মগড় ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে আলুর বীজের দাম কম হলেও সার-কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ বেশি। শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। প্রতি একরে আলু চাষে ব্যয় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। তবে চলতি বছর অসময়ে বৃষ্টিতে যেসব কৃষকের আলুর ক্ষতি হয়েছে। তাদের পুনরায় আলু চাষে ব্যয় বেড়েছে প্রতি একরে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের ভোপলা গ্রামের কৃষক মিঠুন বাবু বলেন, এবারের আলুর যা দাম তা হিসাব করলে দেখা যায় প্রতি বিঘা জমিতে আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। বিঘায় আমাদের আলু উৎপাদন করতে খরচ হয় ২১-২২ হাজার টাকা। কিন্তু আমরা আলুর দাম পাচ্ছি গড়ে ১৮-১৯ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত আমরা আলু চাষে লোকসানের মধ্যে আছি।

কৃষক হাবিবর রহমান বলেন, সারের দাম, শ্রমিকের মজুরি, সেচ সব মিলিয়ে যা খরচ তার চেয়ে আলুর অনেক কম দাম পাচ্ছি আমরা। এবার আলুর উৎপাদন খরচ আর দামের ফারাক মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের।

সবজি ক্রেতা জাহাঙ্গীর হাসান পাপন বলেন, বর্তমানে আলুর দাম বাজারে ১৫ থেকে ১৬ টাকা। শীতকালীন সবজির লাগামহীন দাম ছিলো কিছুদনি আগে। তখন আলুর চাহিদা মানুষের বেশি ছিলো। ফলে আলুর দামও ছিলো। এখন শীতকালীন সবজির দাম মানুষের অনেকটা নাগালের মধ্যে এসেছে তাই আলুর প্রতি মানুষের চাহিদাও কিছুটা কমেছে।

জেলার শাহী হিমাগারের আলু ব্যবসায়ী আব্দুর রফিক বলেন, গত বছর জেলায় অধিক আলু উৎপাদন হয়েছিল। যার কারণে আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমাগেরর আলুটা বাজারে পেয়েছি। ফলে নতুন আলুর চাহিদার ওপর প্রভাব পড়েছে। নতুন আলু বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। যার কারণে আলুর চাহিদা কম, দামও কম।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় প্রতিবেদককে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজির ফলন ভালো হয়েছে এবং একসঙ্গে বাজারে এসেছে। এ জন্যই আলুর দাম একটু কম। তা ছাড়া অসময়ে বৃষ্টির কারণে আগাম জাতের আলুর কিছুটা ক্ষতিও হয়েছে। আশা করছি ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আগাম আলুর চাহিদা বাড়বে। চাহিদা বৃদ্ধি হলে দাম বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, গত বছর জেলায় ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৭ লাখ ৪১ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন। এবার জেলার ৫ উপজেলায় ২৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর চাষ হয়েছে।

এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির আলু কর্তন করা হয়েছে। এতে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৫৫৮ মেট্রিক টন। হিসাব করলে দেখা যায় প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৪৫-৪৮ মণ। যা গতবারের তুলনায় সমান বলা চলে। কিন্তু বর্তমান বাজার দরে চাষিরা প্রতি বিঘায় আলুর দাম পাচ্ছেন ১৮-১৯ হাজার টাকা।

তিনি আরও জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে গ্যানুলা, ডায়মন্ড, রোমানা, স্টিকসহ আরও বেশ কয়েকটি জাতের আলুচাষ করে থাকে আলুচাষিরা।

">

আলুর কেজি ১০ টাকা, লোকসানে চাষিরা!

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

১ জানুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

আলুর কেজি ১০ টাকা, লোকসানে চাষিরা!

ঠাকুরগাঁওয়ে আগাম জাতের আলু বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা দরে। আলুর দাম কম হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।

গত বছর অধিক আলু উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবছরও লাভের আশায় আগাম আলু চাষে ঝোঁকেন আলুচাষিরা। কিন্তু এবার আগাম আলুর দাম কম থাকায় লোকসানের কবলে পড়েছেন তারা। গত বছর আলুচাষিরা প্রতি কেজি আলু মাঠেই বিক্রি করেছিলেন ২৫-২৮ টাকা দরে। এবার তা এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ১০-১২ টাকায়। ফলে উৎপাদন খরচের সঙ্গে আলুর দামের ফারাক বিস্তর।

জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধুপুর গ্রামের কৃষক রবীন রায় বলেন, গতবার যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে এবারও তেমনই আলু উৎপাদন হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সামান্য ক্ষতি হয়েছে তবে তা মানিয়ে নেওয়ার মতোই। কিন্তু গতবার আলুর দাম পেলেও এবার আলুর দাম আমাদের কপালে হাত ঠেকিয়েছে। সামনের দিনগুলো আরও ভয়াবহ হতে পারে।

বড়বাড়ী ইউনিয়নের রুপগঞ্জের গ্রামের আলু চাষি সমশের আলী জানান, ৩০ শতক জমিতে আগাম জাতের আলু চাষে ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ফলন হয়েছে ৩৭ মণ আলু, বাজার মূল্য ১৩ টাকা কেজি দরে প্রায় ২০ হাজার টাকা। তাঁর ৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।

রাণীশংকৈল ধর্মগড় ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে আলুর বীজের দাম কম হলেও সার-কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ বেশি। শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। প্রতি একরে আলু চাষে ব্যয় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। তবে চলতি বছর অসময়ে বৃষ্টিতে যেসব কৃষকের আলুর ক্ষতি হয়েছে। তাদের পুনরায় আলু চাষে ব্যয় বেড়েছে প্রতি একরে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের ভোপলা গ্রামের কৃষক মিঠুন বাবু বলেন, এবারের আলুর যা দাম তা হিসাব করলে দেখা যায় প্রতি বিঘা জমিতে আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। বিঘায় আমাদের আলু উৎপাদন করতে খরচ হয় ২১-২২ হাজার টাকা। কিন্তু আমরা আলুর দাম পাচ্ছি গড়ে ১৮-১৯ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত আমরা আলু চাষে লোকসানের মধ্যে আছি।

কৃষক হাবিবর রহমান বলেন, সারের দাম, শ্রমিকের মজুরি, সেচ সব মিলিয়ে যা খরচ তার চেয়ে আলুর অনেক কম দাম পাচ্ছি আমরা। এবার আলুর উৎপাদন খরচ আর দামের ফারাক মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের।

সবজি ক্রেতা জাহাঙ্গীর হাসান পাপন বলেন, বর্তমানে আলুর দাম বাজারে ১৫ থেকে ১৬ টাকা। শীতকালীন সবজির লাগামহীন দাম ছিলো কিছুদনি আগে। তখন আলুর চাহিদা মানুষের বেশি ছিলো। ফলে আলুর দামও ছিলো। এখন শীতকালীন সবজির দাম মানুষের অনেকটা নাগালের মধ্যে এসেছে তাই আলুর প্রতি মানুষের চাহিদাও কিছুটা কমেছে।

জেলার শাহী হিমাগারের আলু ব্যবসায়ী আব্দুর রফিক বলেন, গত বছর জেলায় অধিক আলু উৎপাদন হয়েছিল। যার কারণে আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমাগেরর আলুটা বাজারে পেয়েছি। ফলে নতুন আলুর চাহিদার ওপর প্রভাব পড়েছে। নতুন আলু বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। যার কারণে আলুর চাহিদা কম, দামও কম।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় প্রতিবেদককে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজির ফলন ভালো হয়েছে এবং একসঙ্গে বাজারে এসেছে। এ জন্যই আলুর দাম একটু কম। তা ছাড়া অসময়ে বৃষ্টির কারণে আগাম জাতের আলুর কিছুটা ক্ষতিও হয়েছে। আশা করছি ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আগাম আলুর চাহিদা বাড়বে। চাহিদা বৃদ্ধি হলে দাম বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, গত বছর জেলায় ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৭ লাখ ৪১ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন। এবার জেলার ৫ উপজেলায় ২৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর চাষ হয়েছে।

এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির আলু কর্তন করা হয়েছে। এতে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৫৫৮ মেট্রিক টন। হিসাব করলে দেখা যায় প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৪৫-৪৮ মণ। যা গতবারের তুলনায় সমান বলা চলে। কিন্তু বর্তমান বাজার দরে চাষিরা প্রতি বিঘায় আলুর দাম পাচ্ছেন ১৮-১৯ হাজার টাকা।

তিনি আরও জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে গ্যানুলা, ডায়মন্ড, রোমানা, স্টিকসহ আরও বেশ কয়েকটি জাতের আলুচাষ করে থাকে আলুচাষিরা।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news