নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় ইউনিক আইডি তৈরির লক্ষ্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে নয়ানী বাগডোকরা শিমুলতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (১৮ই অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নয়ানী বাগডোকরা শিমুলতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে অতিরিক্ত ৫০ টাকা চাঁদা আদায়ের ঘটনায় অভিভাবকদের মাঝে ক্ষােভ ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে ডোমার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাই নি। সেখানকার চেয়ারম্যানের কাছ থেকে খবর পেয়েছি। আজ বুধবার বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ে মোট ১০৩ জন শিক্ষার্থী ও প্রধান শিক্ষক সহ চারজন শিক্ষক আছেন। বেসরকারি ক্লিনিকের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট নয়ন চদ্র রায় ও সাবেক কালেকশন কর্মী মনোরঞ্জন রায় শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করছেন। অপরদিকে, ৫০ টাকা করে চাঁদা তুলছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা। পাশাপাশি জমা নিচ্ছেন মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও শিক্ষার্থীদের জন্মসনদের ফটোকপি। অভিভাবকেরা চাঁদা আদায়ের বিষয়টির প্রতিবাদ করেন এবং সাংবাদিকদের খবর দেন। সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকের কর্মী মনোরঞ্জন রায় পালিয়ে গেলেও আটকা পড়েন নয়ন চন্দ্র রায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, নয়ানী বাগডোকরা শিমুলতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয় সংস্কারের নামে এখানে হরিলুট হয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের পুরাতন দরজা-জানালা গুলো সরকারীভাবে নিলাম না করে তিনি তার খেয়াল-খুশি মতো বিক্রয় করে দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে, তাকে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরমানের অভিভাবক রাজা মিয়া বলেন, নাতি-নাতনিরা এই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। তারা এসে বলে যে ইউনিক আইডি তৈরির লক্ষ্যে বাবা-মায়ের আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং তার জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি জমা দিতে হবে। সেসবের সাথে আরও ৫০ টাকা করে দিতে হবে, তাহলেই রক্ত পরীক্ষা করবে তারা।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শুভ রায়ের অভিভাবক মহান রায় বলেন, রক্ত পরীক্ষার জন্য ৫০ টাকা লাগবে বলে বাচ্চারা জানায়। আমি টাকা নিয়ে এসে দেখি বিদ্যালয়ে গণ্ডগোল হচ্ছে।
পঞ্চম শ্রেনীর আরেক ছাত্র উজ্জল ইসলাম বলেন, আমাদের বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ও আমার জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি জমা দিতে বলেছে। সেইসাথে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য আরও ৫০ টাকা সাথে করে আনতে বলেছেন শিক্ষকরা।
তবে এবিষয়ে নয়ানী বাগডোকরা শিমুলতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য চম্পা রাণী জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন সভা হয়নি এবং তিনি কোথাও কোনো স্বাক্ষর দেননি।
নয়ানী বাগডোকরা শিমুলতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়। ইউনিক আইডির ছবি ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে বিদ্যালয়ে কোনো ক্যাম্প হচ্ছে বা টাকা আদায় করা হচ্ছে এবিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুশীল রায় কিছুই জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।
পত্রিকা একাত্তর/রিশাদ