আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস

অতিথি লেখক

২২ মে, ২০২২, ১ year আগে

আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস
আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস

আজ আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস ২০২২। বিশ্বব্যাপী আজ রবিবার (২২ মে) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতেই জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ২২ মে দিনটি বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ সেল ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ১৯৯২ সালের ২২ মে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে বায়োডাইভার্সিটি (সিবিডি) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

এরপর ৫ জুন ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচীর ধরিত্রী সম্মেলনে সিবিডি বিভিন্ন দেশের স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ১৬৮টি দেশ সিবিডি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং সিবিডি ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। বর্তমানে এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ১৯৫ টি।

জীববৈচিত্র্য কী?

প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভিদ, প্রাণী ও আণুবীক্ষণিক জীব সমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যে বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে, সেই বাস্তুতন্ত্রে অগনিত নানা ধরনের জীব প্রজাতির সমাহার বা সমাবেশকে জীববৈচিত্র্য বলে।

আর স্থলজ এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র এবং এই বাস্তুতন্ত্রের বাস্তু কাঠামো সহ সমস্ত উৎসে প্রজাতির প্রাচুর্যকে জীববৈচিত্র্য বা জীববৈচিত্র্য হিসাবে অভিহিত করা হয়। এটি পৃথিবীতে (বা কোনও অঞ্চল) পাওয়া জিন, প্রজাতি, বাস্তুতন্ত্র এবং বাস্তুসংস্থানীয় ঘটনাগুলির সংগ্রহ।

জীববৈচিত্র্যবাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য তৈরি করে এবং পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলে। বায়োটিক প্রজাতির টেকসইতার জন্য এটি প্রয়োজনীয়। জীববৈচিত্র্য শিল্প, ফিশারি, পশুপালন, বনজ, ফার্মাসি এবং কৃষিকাজের মতো ক্ষেত্রগুলিতে পরিষ্কার বাতাস এবং জল সরবরাহে ব্যবহৃত হয়। উচ্চ জীববৈচিত্র্য অর্থনৈতিক লাভ এবং কৃষি, প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের বিকাশে অবদান রাখে।

উদ্ভিদের বিভিন্নতা: এটি তাজা বাতাস সরবরাহ, ক্ষয় রোধ, মাটির গঠনে জৈব পদার্থ যুক্ত করার এবং মাটি বিশ্রাম দেওয়ার জন্য নির্দেশিত হয়। এটি বাস্তুতন্ত্রে বায়োটিক প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমকে টেকসই করে তোলে।

আমাদের দেশের নির্দিষ্ট জীববৈচিত্র্যের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে জুনিপার, পপলার, পাইন, ওক, আকরন ইত্যাদি। বনজ, স্টাম্প, ক্লোভার, মাউন্টেন অ্যাশ, ম্লেঙ্গেলি, হাথর্ন, আহলাত, গ্লেভিজ, অ্যাঙ্গুস্টিফোলিয়া, হেজহগ, তফলান এবং আকুর ইত্যাদি চিকিত্সা ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করে।

প্রাণী বৈচিত্র্য: দুর্ভাগ্যক্রমে, তারা শিকার, গবাদি পশু এবং পরিবহন ব্যতীত গিনি পিগ হিসাবে পোশাক এবং clothingষধে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এমন প্রজাতি রয়েছে যা উদ্ভিদগুলিতে পরাগায়ন সরবরাহ করে বৈচিত্র্য বজায় রাখতে এবং জৈব পদার্থকে পচা দিয়ে মাটিতে নিয়ে আসে।

গবাদি পশু, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। প্রজাতি পশুপালন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশের নির্দিষ্ট জীববৈচিত্র্যের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে সমুদ্রের তীর, ট্রাউট, তুষার ইত্যাদি include প্রজাতি ফিশিং এছাড়াও উপকারী।

বাস্তুতন্ত্র বৈচিত্র্য: এটি জীবিত সম্প্রদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা ব্যবস্থা সরবরাহ করে। সমালোচনামূলক আন্তঃনির্ভরতার উত্থানের সাথে, টেকসই বিকাশের পদ্ধতির প্রাথমিক তথ্য উত্থিত হয়। বাস্তুসংস্থান পরিষেবাগুলির উত্থানের ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রজাতির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

জীববৈচিত্র্য তিনটি শ্রেণিবিন্যাসে পরীক্ষা করা হয়

১.জিনগত বৈচিত্র্য: জেনেটিক পার্থক্য উপ-প্রজাতি, বিভিন্নতা, জনসংখ্যা বা প্রজাতিতে পরিমাপ করা হয়। সাধারণত এটি বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন জিন। এটি ব্যক্তিদের যে জেনেটিক তথ্য রয়েছে তা বোঝায়।

২.প্রজাতির বিভিন্নতা: এটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা অঞ্চলে সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন প্রজাতির পার্থক্য এবং সংখ্যাকে বোঝায়।

৩.বাস্তুতন্ত্র বৈচিত্র্য: সমস্ত ইন্টারেক্টিভ জীব এবং তাদের পরিবেশ। খাদ্য চেইন এবং শক্তি প্রবাহ যেমন চক্র এবং জলবায়ু, আগুন ইত্যাদি। এটি জীবজৈবতা সংরক্ষণ করে সমস্ত অ্যাসিওটিক উপাদানগুলি কভার করে। ফলস্বরূপ, প্রজাতি, প্রজাতি সম্প্রদায়, সম্প্রদায় বৈশিষ্ট্য এবং প্রক্রিয়া সংরক্ষণ করা হয়।

আর আমাদের প্রধান খাদ্যশস্যগুলো উদ্ভিদ থেকে আসে। আমাদের প্রয়োজন ৯০ ভাগ ক্যালরি; এসব আমরা পেয়ে থাকি ৮০ রকমের উদ্ভিদ থেকে। এছাড়া ফল, বাদাম জাতীয় শস্য, মাশরুম, মধু, মসলা জাতীয় শস্যসহ অন্যান্য অনেক খাবারই আমরা উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি। বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ চিকিৎসার প্রাথমিক উৎস হিসেবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল।

বাজারে প্রচলিত ওষুধের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগের উৎসই হলো উদ্ভিদ ও প্রাণী। ক্যান্সার, ব্যথানাশক, রক্তচাপ, ম্যালেরিয়াসহ অনেক রোগের চিকিৎসায় ঔষধি উদ্ভিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এখনও অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী গ্রীষ্মম-লীয় বনাঞ্চল বা সাগর-মহাসাগরে আছে যার উপকারিতা বা ব্যবহার আমরা জানি না।

বাংলাদেশে ৫০০-এরও বেশি উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যার ঔষধি গুণাগুণ আছে। অনেক প্রজাতি প্রাকৃতিকভাবেই ঝোপঝাঁড় বা বনাঞ্চলে পাওয়া যেত; কিন্তু এখন পাওয়া যায় না। ঔষধি উদ্ভিদ ছাড়াও আমাদের ঘরবাড়ি তৈরি, আসবাবপত্র ও জ্বালানির জন্য বন বা উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যক্ষ অবদান ছাড়াও জীববৈচিত্র্য অনেক জাতিগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য আমাদের বিশ্রাম ছাড়াও শান্তি, আনন্দ, সৌন্দর্য ও চিন্তার খোরাক জোগায়। এতদ্ব্যতীত জীবজগতে পরিবেশ ও প্রতিবেশের যথাযথ ভূমিকা পালনে জীবজগতের প্রাচুর্যতা খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে, যেমন পরাগায়ণের জন্য অনেক সপুষ্পক উদ্ভিদে মৌমাছি, প্রজাপতি, পাখি ও বাদুড়ের উপস্থিতি ও প্রাচুর্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত। বনের উদ্ভিদরাজি আমাদের বাতাস ও পানি পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে।

পৃথিবীর উষ্ণতার জন্য প্রধান দায়ী গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড গাছপালা কর্তৃক শোষণের মাধ্যমে আমাদের আবহাওয়া তথাতাপমাত্রাকে শীতল করতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনাঞ্চলগুলোতে বহু প্রজাতির সমন্বয়ে জীবজগতের প্রাচুর্যতা বজায় রাখা যায়। এসব প্রাচুর্যময় জীবজগৎ আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের একমাত্র সুন্দরবনের ওপর প্রায় ১০ লক্ষাধিক লোকের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। তাছাড়া, বিভিন্ন উপজাতীয় জনগোষ্ঠী জীবন-জীবিকা নির্বাহে সরাসরি বনের বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপর নির্ভর করে থাকে।

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ এক সময় জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ সপুষ্পক উদ্ভিদ, ২৭৬ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ, ৪৪২ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ২২ প্রজাতির উভচর, ১০৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৮৮ প্রজাতির স্থানীয় পাখি ও ১১০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বিদ্যমান ছিল।

কিন্তু দুর্ভাগ্য যে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবেশ বিপর্যয়কারী উন্নয়ন কার্যক্রম, বন উজাড়, প্রাকৃতিক সম্পদের অধিক আহরণ, আবাসস্থল ধ্বংস, আগ্রাসী প্রজাতির আগমন ইত্যাদি আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য হ্রাসে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। কৃষিশস্য বৈচিত্র্যেও বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী ছিল। কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে এক সময় প্রায় ১৫ হাজার রকমের ভ্যারাইটিজ জাতের ধান বিদ্যমান ছিল।

বিপুল জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মিটানোর জন্য উচ্চফলনশীল ধান (ইরি, হাইব্রিড ইত্যাদি) চাষ করতে গিয়ে সেসব ভিন্ন স্বাদ ও জাতের বৈচিত্র্যধর্মী ধানের জাতগুলো আমরা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছি। এসব উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ করতে গিয়ে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে জলাভূমিতে মাছসহ বিভিন্ন ফাইটোপ্লাংকটন, জুপ্লাংকটনও হারিয়ে ফেলেছি।

বাংলাদেশের সুন্দরবনে ২৬৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৩০০ প্রজাতির পাখি, ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, ১৭৭ প্রজাতির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ৭ প্রজাতির কাঁকড়া, ১৬ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ৩ প্রজাতির কচ্ছপ ও ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে।

আমাদের বিশ্বাস সঠিকভাবে সার্ভে করা হলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে আশংকার বিষয় বিভিন্ন কারণ যেমন ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও অত্যধিক সম্পদ আহরণের ফলে সুন্দরবনের ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি ও ৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী হুমকির সম্মুখীন এবং বিলুপ্ত হওয়ার পথে।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব একটি সমাজ তৈরি করতে গেলে বিভিন্ন পেশার লােকের দরকার হয়, যারা নিজ নিজ কাজের দ্বারা সমাজকে টিকিয়ে রাখে। তেমনি একটি বাস্তুতন্ত্রের সুস্থায়ীভাবে টিকে থাকার জন্য জীববৈচিত্র্যের প্রয়ােজন হয়, যেখানে প্রত্যেক প্রজাতি তাদের নিজস্ব ভূমিকা পালন করে। যে কারণগুলির জন্য জীববৈচিত্র্যের প্রয়ােজন হয় সেগুলি হল—

অর্থনৈতিক মূল্য : মানুষ তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধ প্রভৃতির জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। জীববৈচিত্র্যের জন্যেই মানুষ তার চাহিদা প্রকৃতি থেকে মেটাতে সক্ষম।

নান্দনিক মূল্য : বিভিন্ন প্রজাতির জীব প্রকৃতিকে বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর করে তােলে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভােগ করতে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ পাহাড়, সমুদ্র সৈকত, বনাঞ্চল, জাতীয় উদ্যান প্রভৃতিতে ভ্রমণ করতে যায়।

নৈতিক মূল্য : প্রত্যেক জীবের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কিত ঘােষণাপত্রে এই চিন্তাধারা স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই মানুষের কর্তব্য প্রতিটি প্রজাতির জীবকে এই পৃথিবীর বুকে বাঁচিয়ে রাখা।

পরিবেশ রক্ষা : প্রত্যেক জীব বাস্তুতান্ত্রিকভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একটি জীবের বিনাশ অন্য কোনাে জীবের বিপন্নতার কারণ হতে পারে। তাই মানুষের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার প্রধান শর্ত হল এই জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখা।

আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য : বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে উদ্ভিদ ও প্রাণীর আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের উল্লেখ আছে। হিন্দুধর্মে বিভিন্ন উদ্ভিদ যেমন-তুলসী, বট, অশ্বত্থ ইত্যাদি পূজোর বিধান আছে। হিন্দু দেবদেবীদের অনেকেরই বাহন হল বন্যপ্রাণী। সেইসব প্রাণীদের হত্যা করা ধর্মে নিষিদ্ধ। পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মেও জীবের প্রতি অহিংসা প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। তাই মানুষের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক চেতনা রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের বিশেষ ভূমিকা বর্তমান।

পৃথিবীর তিন ভাগেই পানি দ্বারা বেষ্টিত। পৃথিবীতে সমুদ্রের মোট আয়তন ৩৬১ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। এটি পৃথিবীর জীবনচক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ গ্রহে প্রতি বছর গাছপালার মাধ্যমে যে পরিমাণ বিশুদ্ধ অক্সিজেন বায়ুতে মিশে তার সত্তর শতাংশই আসে সামুদ্রিক উদ্ভিদ থেকে। সমুদ্রই মানুষের জন্য জলজ সম্পদের ভা-ার। সমুদ্রের পানি বায়ুতে ভেসে আল্লাহর করুণার মেঘ হয়ে এসে বৃষ্টিরূপে পতিত হয়। পৃথিবীর প্রতিটি বালুকণা সিক্ত হয়ে নব জীবন লাভ করে।

প্রকৃতির প্রতিটি গাছপালা ফুলে ফলে ভরে ওঠে। সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে ফসলের মাঠ। পানির অপর নাম জীবন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রতিটি মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছি’ (সুরা আম্বিয়া : ৩০)। আজ পানির উৎস ভা-ার সমুদ্রই নানাভাবে দূষণের শিকার। সব প্রকার বর্জ্য আবর্জনা এবং পারমাণবিক পরীক্ষা শেষ স্থল সাগর-মহাসাগর। এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ২০ বিলিয়ন টন বর্জ্য ও বিভিন্ন প্রকার আবর্জনা সাগরে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছে জাহাজ ও টেংকার হতে নিষ্কাশিত পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ।

নার্ভ গ্যাস, বড় ও মাঝারি আকারের পাট, কাগজ, ম-, টেক্সটাইল, সার, প্লাস্টিক, ট্যানারি, খাদ্য ও পানীয়, চিনি, তামাক, এলকোহলজাতীয় শিল্প-কারখানা হতে নির্গত তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ সরাসরি এবং মৃত্তিকা হতে নিঃসরিত হয়ে সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এসব বিষাক্ত বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ সমুদ্রে প্রতিনিয়ত নিক্ষিপের ফলে সামুদ্রিক পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এতে সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী ও মৎস্যকুলের অস্তিত্ব বিপর্যয় হতে চলেছে। সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রে উদ্ভুত বিষাক্ত বায়ুর প্রভাবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। সুতরাং, সেদিকে আমাদের দিতে হবে সজাগ দৃষ্টি। পরিবেশ দূষণ, সামুদ্রিক দূষণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এদিকে সামুদ্রিক মাছে রয়েছে বহু উপকারিতা, আছে মানু্ষরে প্রয়োজনীয় উপকরণ চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, মাছের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো মানুষের হৃদযন্ত্র কার্যকর ও সুরক্ষিত রাখার জন্য কাজ করে। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষক ড. দারিউস মোজাফফারিয়ান বলেন, কেউ যদি নিয়মিত মাঝারি মাছ খান তাহলে তার হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

সারা বিশ্বে পরিচালিত ৩০টি বড় ধরনের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যারা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার বা দুইবার মাছ খান তাদের, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি গড়ে ৩৬ শতাংশ কমে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, আর তিনিই সে সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা (মাছের) গোস্ত খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার অলঙ্কারাদি, যা তোমরা পরিধান কর।

আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে, তা পানি চিরে চলছে এবং যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১৪)।পরিশেষে বলবো পরিবেশকে বাঁচানো এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এগিয়ে আসি, পরিবেশ সংরক্ষণের জ্ঞানার্জন করি এবং পরিবেশ রক্ষায় সচেষ্ট হই তবেই সুন্দর সবল সুস্থ দেহে বসবাস করতে পারব। পরিবেশ হবে আমাদের অনুকূলে। সুগঠিত সমাজ পাব, পাব নয়নাভিরাম মুগ্ধকর পরিবেশ।

লেখক, প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ।

ইমেইল, drmazed96@gmail.com

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news