হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে সমাজপতিরা ৪টি পরিবারকে প্রায় ৩ বছর যাবৎ সমাজচূত্য করে রেখেছেন সমাজপতিরা।
সমাজচূত্য করে রাখার কারণে মহল্লার মানুষজন তাদের সাথে কথা বলেন না। সামাজিক কোন অনুষ্টানে তারা আমন্ত্রন পাননা। এছাড়া মহল্লার পঞ্চায়েতী টাকার ভাগ থেকেও তাদেরকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।
একটি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের সময় ব্যাক্তি মালিকানার ভূমি জোরপূর্বক দখলে বাধা দেওয়ায় চাদাবাজির মামলা ও সমাজচূত্য করা হয়। সমাজচূত্যর মত সংবিধান বিরোধী ঘটনাটি ঘটেছে বানিয়াচং উপজেলা সদরের ২নং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের সৈদরটুলা ছান্দের(পঞ্চায়েত) পাঠানটুলা গ্রামে।
প্রতিকার চেয়ে বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসনের নিকট ৩১ মে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী অলফুজুর রহমান খান।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়,বানিয়াচং তোপখানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমি অভিযোগকারী অলফুজুর রহমান খানের দাদা সাজিদুর রহমান খান প্রায় শত বছর পূর্বে দান করেছিলেন।
২০২১ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করার প্রয়োজনে পুনরায় আরও কিছু ভূমির প্রয়োজন হওয়ায় অলফুজ খান আরও ১ হাত ভূমি দিতে রাজি থাকলেও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিঠির তৎকালীন সভাপতি আসাদুর রহমান খান আরও বেশি ভূমি জোরপূর্বক নিতে চাইলে অলফুজ খান বাধা দেন।
২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী বিরোধ সৃষ্টি হলে ২০ফেব্রুয়ারী পাঠানটুলা মক্তবে এক সালিশ বিচার অনুষ্টিত হয়।
সালিশে মহল্লার সর্দার তালেবুর রহমান,আসাদুর রহমান খান, শান্ত মিয়া ও তৎকালীন ছান্দ সর্দার এনামূল বাহার খান সালিশে প্রভাব বিস্তার করে অলফুজ খান ও তার তিন ভাই মোঃ মাহফুজুর রহমান খান,মওসুফুর রহমান খান, সুহাদুর রহমান খান কে পাঠানটুলা গ্রাম ও সৈদরটুলা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার তথা একঘরে করার রায় প্রদান করা হয়।
সালিশের রায় অনুযায়ী মহল্লার অন্যান্য কোন মানুষ তাদের সাথে কথাবার্তা,লেনদেন বা সামাজিক কোন অনুষ্টানে আমন্ত্রণ করতে পরবেন না। একই সাথে মহল্লার পঞ্চায়েতী টাকার অংশ থেকেও তাদের কে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ ধরনের আইন বিরোধী গ্রাম্য বিচারের রায়ের ফলে অলফুজ খান সহ তারা ৪ ভাই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সৈদরটুলা ছান্দে বর্তমানে নেতৃত্বর দ্বন্দ নিয়ে দুভাগে বিভক্ত থাকায় ছান্দ সর্দার নাই। তারপরও কোন শান্তিবাদী মানুষ প্রতিবাদে কোন কথা বলতে ভয় পান।
এ ব্যাপারে ভূক্তভোগী অলফুজ খান জানান,আমার দাদা বিদ্যালয়ের জন্য ভূমি দিয়েছেন।আমরাও দিয়েছি। কিন্তু অযথা আরও বেশি ভূমি দাবি করায় আমি বাধা দেই।এতে করে সমাজপতিরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চাদাবাজির মামলা দায়ের করে। ওই মামলাটি ইতমধ্যে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। প্রতিনিয়তই আমাকে প্রাণনাশের হুমকি ও দিচ্ছেন সমাজপতিরা। বর্তমানে আমরা মহল্লার সবকিছু থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সমাজপতি জানান,অলফুজ খানদের পরিবারের সামান্য কিছু ভূমি বিদ্যালয়ের বাউন্ডারীর ভিতরে ঢুকেছে এটা সত্য। তখনকার সময়ের বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে অলফুজ খান বাজে আচরণ করায় আমরা এটা আর সামাল দিতে পারি নাই।একজন ইউপি চেয়ারম্যান অলফুজ খানের সাথে পূর্ব বিরোধের সুযোগ নিয়ে এ ধরনের রায় করাতে বাধ্য করেছেন।
সাবেক ছান্দ সর্দার এনামূল বাহার খান জানান, অলফুজ খানকে মহল্লা থেকে বহিস্কার করা হয় নাই। মহল্লার টাকা না পাওয়ার কারণ হল,মহল্লার আয়ের টাকা আসে উইছুফ খান ওয়াক্ফ এষ্টেট থেকে। এষ্টেট থেকে টাকা পেতে হলে কিছু শর্ত পালন করতে হয়। সে শর্ত ভঙ্গ করেছে। তবে কি শর্ত আমি তা জানিনা। আমি বর্তমানে মোয়াতল্লী আছি কিনা তাও জানি না।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ পাওয়ার কথাটি স্বীকার করে বলেন,আমার কাছে এরকম একটি অভিযোগ এসেছে। আমি অভিযুক্তদের নোটিশ করে কার্যালয়ে ডেকে বিষয়টি দেখবো।
পত্রিকা একাত্তর/ আকিকুর রহমান