patrika71
ঢাকারবিবার , ২১ মে ২০২৩
  1. অনুষ্ঠান
  2. অনুসন্ধানী
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া
  7. ইসলাম
  8. কবিতা
  9. কৃষি
  10. ক্যাম্পাস
  11. খেলাধুলা
  12. জবস
  13. জাতীয়
  14. ট্যুরিজম
  15. প্রজন্ম
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পরিচয় গোপন করে মেয়ের কেন্দ্রে হল সুপার বাবা

জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল
মে ২১, ২০২৩ ২:৩৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নড়াইলে মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে হল সুপারের দ্বায়িত্ব পালন করার ঘটনা নিউজ হওয়ার পর কর্র্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করেছে। বহিস্কৃত হল সুপার মো. শরিফুল ইসলাম সদর উপজেলার আরবিএফএম ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে হল সুপারের দ্বায়িত্বে ছিলেন। নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ কিবরিয়া বলেন, শিবানা তাঁর স্কুল হতে নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে ১১৪ নং রুমে পরীক্ষা দিচ্ছে।

শিবানার পিতা শরিফুল ইসলাম আরবিএফএম ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম মেয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রেই হল সুপারের দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন। পত্রিকায় লেখালেখি হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষক শরিফুল ইসলাম মেয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে কোন দ্বায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না-এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক ফিরোজ কিবরিয়া বলেন, এ ধরনের দ্বায়িত্ব পালনের কোন সুযোগ নেই। প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম মেয়ে শিবানা’র পরীক্ষা দেয়ার তথ্য গোপন করেই হলসুপারের দ্বায়িত্ব নিয়েছিলেন।

নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব নাসির উদ্দিন বলেন, শরিফুলের মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে তা তিনি জানতেন না। গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে জেনে তাকে বরখাস্ত করেছেন। কেন্দ্র সচিব ও নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন আরোও বলেন, মেয়ের পরীক্ষার তথ্য গোপন করে মেয়ের সেই পরীক্ষা কেন্দ্রে দ্বায়িত্ব পালন করে শিক্ষক শরিফুল ইসলাম গুরুতর অপরাধ করেছেন। এ কারনে তাকে পরীক্ষার সকল দ্বায়িত্ব হতে বহিস্কার করা হয়েছে।

সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসএম সুলতান মাহমুদ বলেন, প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। বিধায় কর্তৃপক্ষ তার বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। নড়াইল জেলা শিক্ষা অফিসার মো. হায়দার আলী বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। কেন্দ্র সচিব তাকে বরখাস্ত করেছেন। উল্লেখ্য এসএসসি পরীক্ষার শুরুর দিন থেকেই নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার শরিফুল ইসলামের বিরূদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠে। তারপরও তিনি হল সুপারের দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন।

তার এ অসাধু কারবার বন্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় পত্রিকায় নিউজ করা হয়। অনুসন্ধানে শরিফুল ইসলামের দুর্নীতি অনিয়ম ও নিজ মেয়েকে পরীক্ষার হলে সরাসরি সহযোগিতার বিষয়টি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় তথ্যবহুল সংবাদ প্রচারিত হলে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে তাকে দ্বায়িত্ব হতে অব্যহতি দেন। কিন্তু তার বিরূদ্ধে বড় ধরনের কোন শাস্তির ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে শরিফুলের খুঁটির জোর কোথায়? এতো বড় দুর্নীতি অনিয়ম করার সাহস পেল কিভাবে? তার এ কুকর্মের সাথে আরোও কারা জড়িত? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সুধী সমাজে।

শুধু তাই নয়, আরবিএফএম ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অংকের শিক্ষক প্রকাশ্যে প্রধান শিক্ষক শরিফুলের মেয়ে শিবানাকে অংক পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হলে সহযোগিতা করেন। অন্য পরীক্ষার্থীদের বিরক্তি হওয়ায় তারা একটু আপত্তি জানিয়ে শিবানা খাতুনকে নিরবে সহযোগিতা করার অনুরোধ করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই শিক্ষক হলের অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের ধমক দিয়ে তাদের সাথে অত্যন্ত দূর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি সর্বমহলে ছড়িয়ে পড়ে। অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হন। কিন্তু সন্তানদের আরোও ক্ষতি হওয়ার ভয়ে নিরবে চেপে যান।

তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অথচ সেই অংক শিক্ষকের বিরূদ্ধে ন্যুনতম কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আরবিএফএম ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বিশেষ কায়দায় তদবীর করে মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে হল সুপারের দ্বায়িত্ব নেন। তার মেয়ে শিবানা নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার পরীক্ষা কেন্দ্র নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে।

এসএসসি পরীক্ষা শুরু দিন থেকেই নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার ও আরবিএফএম ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামের বিরূদ্ধে নিজের মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী শিবানাকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ উঠে। প্রতিটি পরীক্ষায় নৈর্বক্তিক প্রশ্নের উত্তর তাকে দিয়ে দেয়া হয়। ইংরেজি পরীক্ষার দিন তাকে ব্যকরণ অংশের সকল উত্তর প্রস্তুত করে দেয়া হয়। অংক পরীক্ষার দিন তাকে লুজ সীটে অংক করে দেয় আরবিএফএম ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অংকের শিক্ষক।

নিয়মিত ভাবে প্রতিটি পরীক্ষার দিন শরিফুল ইসলাম মেয়ে শিবানার পরীক্ষা কক্ষে গিয়ে সহযোগিতা করেন। নিজের পছন্দের শিক্ষককে ওই কক্ষে ডিউটি দিয়ে তাকে দিয়ে মেয়েকে সহযোগিতা করান। ইংরেজি ও অংক পরীক্ষায় ওই মেয়েকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করা হয়। এতে ওই কক্ষের অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অসুবিধা হওয়ায় তারা একটু আপত্তি করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। অংক পরীক্ষার দিন শরিফুল ইসলাম নিজ বিদ্যালয়ের অংকের শিক্ষককে মেয়ের পরীক্ষা কক্ষে ডিউটি দেন মেয়েকে সহযোগিতা করার জন্য।

গুঞ্জন আছে ওই শিক্ষক লুজ সীটে পরীক্ষার্থী শিবানাকে অংক করে দেন এবং তার পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাপক সহযোগিতা করেন। এতে পাশের অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হওয়ায় তার আপত্তি করে। এতে উত্তেজিত হয়ে ওই শিক্ষক রাজেশ্বরী নামে এক পরীক্ষার্থীকে ধমকান। পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার হয়ে ক্ষমতা বলে প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম যা-খুশি তাই করেছেন। এতে অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের খুব অসুবিধা হয়েছে। কেউ কিছু বলতে গেলে ক্ষতি করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এতে সাধারণ পরীক্ষর্থীদের মধ্যে আতংক ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিষয়টি পরীক্ষা কেন্দ্রের গন্ডি পার হয়ে অভিভাবক পর্যায়ে পৌছায়। কিন্তু সন্তানের অনাকাংখিত ক্ষতির কথা ভেবে কেউ কিছু বলেননি। কারণ ইতোপূর্বে শিক্ষকের রোষানলে পড়ে একাধিক পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার উদাহরণ নড়াইলে রয়েছে। জানা যায়, প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বিরূদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

নিয়োগ বাণিজ্যসহ দুর্নীতি অনিয়মের অন্তহীন অভিযোগ তার বিরূদ্ধে। মানুষের সাথে আপত্তিকর ভাষায় কথা বলেন। তার কারনে আরবিএফএম ভবানীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনায় ধ্বস নেমেছে। বিদ্যালয়ে চরম দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামের হলসুপারের দ্বায়িত্ব পালনের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি বিশেষ কায়দায় দেনদরবার ও তদবীর করে হলসুপারের দ্বায়িত্ব নেন।

পত্রিকা একাত্তর / হাফিজুল নিলু