চেয়ারম্যানের নির্দেশে স্কুলের গাছ অপসরণের নামে কর্তনের চেষ্টা


উপজেলা প্রতিনিধি, শার্শা প্রকাশের সময় : ১১/০৫/২০২৩, ৯:৪৬ অপরাহ্ণ /
চেয়ারম্যানের নির্দেশে স্কুলের গাছ অপসরণের নামে কর্তনের চেষ্টা

যশোরের ঝিকরগাছার শংকরপুরে অপসরণ করার নামে স্কুলের গাছ কর্তনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের জগদান্দকাটিতে গাছ অপসরণের নামে গত ১০ই মে সকালে জগদান্দকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি শিশু গাছ কর্তন করা হয়েছে। গাছটি কর্তন করার জন্য শংকরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শ্রী গোবিন্দ চ্যাটার্জী কাঠ ব্যবসায়ী সিরাজুলকে নিদের্শ দেন।

কাঠ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, গোবিন্দ চেয়ারম্যান সাহেব অর্ডার নিয়ে আসছে টিএনও অনুমতি দিয়েছে গাছ উঠিয়ে নিয়ে আসার জন্য। তাই চেয়াররম্যানের নির্দেশে গাছটি কেটেছি। ইউএনও’র লিখিত কোন অনুমতি পত্র আছে কি জানতে চাইলে বলেন, লিখিত কোন অনুমতি পত্র নাই। চেয়ারম্যানের মুখের কথায় এই কাজ করেছি। তিনি তো চেয়ারম্যান তাকে অস্বীকার করি কি করে। গাছটি কত টাকায় কিনেছেন জানতে চাইলে বলেন ৩৯হাজার টাকায় কিনেছি। লিখিত অনুমতি পত্র ছাড়ায় আপনি গাছ কাটলেন কেনো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা বলেন।

এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদা খাতুন বলেন, আম্ফান ঝড়ে গাছটি পড়ে যায় গাছটি অপসারণের জন্য টিএনও বরাবর আবেদন করা হয় কিন্তু সেভাবে অপসারণ করা হয় নায়। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব বললেন টিএনও সাহেব অনুমতি দিয়েছে গাছটি অপসারণের জন্য। এটা টেন্ডারের মাধ্যমে কাটা হচ্ছে কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা টেন্ডারের মাধ্যমে কাটা হচ্ছে না। গাছটি কাটার কোন লিখিত অনুমতি পত্র পেছেন কি জানতে চাইলে বলেন, লিখিত কোন অনুমতি পত্র পাইনি। টিএনও স্যার চেয়ারম্যানকে অনুমতি দিয়েছে সেই অনুমতি বলে গাছটি বিক্রি হচ্ছে এবং কাটা হচ্ছে। টিএনও স্যার যে অনুমতি দিয়েছে তার তো একটি অনুলিপি আমার কাছে আসতে হবে কিন্তু সেটা তো পাইনি এবং গাছ কাটছে সেটাও আমি আগে থেকে জানতাম না। আমি ফোনের মাধ্যমে এবং স্কুলে এসে যখন জানলাম গাছটি কাটা হচ্ছে তখন চেয়ারম্যানের সাহেবের কাছে ফোন দিলে তিনি বলেন অনুমতি পত্র আছে আমি তো বাহিরে আছি উপজেলায় যাচ্ছি আমি এসে তোমার ব্যবস্থা নিচ্ছি, গাছ কাটছে কাটুক সমস্যা নেই অনুমতি দিয়েছে।

প্রধান শিক্ষক আরো বলেন যিনি গাছ কাটছেন (সিরাজুল) তার কাছে ফোন দিলে বলেন অনুমতি পত্র আছে আমি ফটোকপি করে পাঠাচ্ছি। কিন্তু অনুমতি পত্র না পাওয়ায় আমি আমার ঊদ্ধত্বন কতৃপক্ষকে জানালে তারা বলেন আমি কোন অনুমতি পত্র না পেয়ে থাকলে গাছ কাটা বন্ধ করে দিতে বলেন। তখন যিনি গাছ কাটছিলো (কাঠ ব্যবসায়ী সিরাজুল) তাকে ডেকে নিষেধ করলে তিনি গাছ কাটা বন্ধ করে দেন।

গাছ বিক্রি ও কাটার বিষয়ে ১০নং শংকরপুর ইউপি চেয়ারম্যান শ্রী গোবিন্দ চ্যাটার্জি’র কাছে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাছটি পড়ে আছে টিএনও সাহেব গাছটি অপসারণের নিদের্শ দেন এবং গাছটি অপসারণ করে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এনে রাখতে হবে। ইউএনও গাছটি কাটার অনুমতি দিয়েছে কি জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন অনুমতি দিবেনা তো, কিভাবে দেবে গাছটি তো অপসরণ করতে হবে। অপসরণ করে কোথায় রাখতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন ঐ গাছে আর হাতই দেবো না কারণ অপসারণ করতে অনেক টাকা লাগবে ঐ টাকা দেবে কিডা, কিন্তু আপনি তো ইউনিয়ন পরিষদে রাখার বলেছে প্রথমে, এখন হাত দিবেন না কেনো তিনি বলেন স্কুলের আশপাশে রাখতে হবে, আবার ইউনিয়ন পরিষদে রাখলেও হবে। তারপর টেন্ডার হবে। কাঠ ব্যবসায়ী সিরাজুলকে গাছ কাটার অনুমতি তো আপনি দিয়েছেন এমন প্রশ্ন করলে বলেন, সাংবাদিক সাহেব শুধু সাংবাদিকতা করলে হবে না ভাল মন্দ দেখতে হবে। সাংবাদিক বলেন সরজমিনে দেখেছি গাছ কাটা হয়েছে এমন কথা বললে চেয়ারম্যান বলেন না না তা কাটবে কেনো! ওটা তাহলে ভুলক্রমে করেছে, যেটা গর্তের ভিতরে পরে আছে সেটা সম্পসরণ করে উপরে তুলতে হবে। কিন্তু অপসারণের নামে গাছটি তো কাটা হয়েছে এবং কাঠ ব্যবসায়ী সিরাজুল আপনার কাছ থেকে কিনেছে এমন প্রশ্ন করলে চেয়ারম্যান গোবিন্দ চ্যাটার্জি বলেন, বিক্রি করেছি কোন ডকুমেন্ট আছে? ঐ গাছ নষ্ট হয়ে যাবে কেউ বিক্রি করতে পারবেনা। কিন্তু কাঠ ব্যবসায়ী তো বললো আপনি গাছটি ৩৯হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলেছেন গাছ কাটুক কোন সমস্যা নেই এমন প্রশ্ন করলে চেয়ারম্যান গোবিন্দ বলেন, তোমরা (সাংবাদিক) তো আছো গুতু মারার তালে। গাছটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তোমরা অর্ডার করে কাটাও না কেনো। ঐ গাছটি নষ্ট হয়ে যাবে। সাংবাদিকতা করার হিসাব আছে। টিএনও সাহেব সম্পসরণ করতে বলেছে।

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক বলেন, সকালেই গাছ কাটা শুরু করেছিলো আমি জানতে পারার সাথে সাথে যেহেতু প্রাইমারী স্কুলের গাছ সেহেতু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছিলাম এবং তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমার কাছে আবেদন করেছিলো যে গাছটি অনেক দিন ধরে হেলে পরে আছে গাছটি অপসারণের জন্য। আইন বিধি মোতাবেক জনস্বার্থে কোথাও রিক্স থাকে গাছ আপসরণ করার প্রয়োজন হয় ইউনিয়ন পরিষদের সে অধিকার রয়েছে। সে হিসাবে তাকে বলেছিলাম আপসারণ করা যায়। পরবর্তীতে বিধিমোতাবেক নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। উনি সেভাবেই গাছটি কাটতে গিয়েছিলেন পরবর্তীতে যখন জানতে পারি এটা প্রাইমারী স্কুলের গাছ আমি তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কে জানাই তখন তিনি গাছ কাটা বন্ধ করে দেন। কিন্তু গাছ কাঠ ব্যবসায়ী সিরাজুলের কাছে ৩৯হাজার টাকায় গোবিন্দ চেয়ারম্যান বিক্রি করেছে এই বিষয়ে জানেন কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান বলেছিলো গাছটি জনস্বার্থের জন্য রিক্স বলে আমাকে আবেদন করেছিলেন এই জন্য আমি কাটতে বলেছিলাম কিন্তু চেয়ারম্যান যদি একটি গাছ দেখিয়ে অন্য গাছ কাটে তাহলে সে ভুল করেছে আপরাধ করেছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জেনেই প্রধান শিক্ষককে গাছ কাটা বন্ধ করার নিদের্শ দেওয়া হয়। যাহারা গাছটি কাটছিলো তাদের কাছে কোন বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে গাছ কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পত্রিকা একাত্তর/