ডোমারে হযরত শাহ্ কলন্দর (রহঃ) এর ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত


উপজেলা প্রতিনিধি, ডোমার প্রকাশের সময় : ১১/০৫/২০২৩, ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ /
ডোমারে হযরত শাহ্ কলন্দর (রহঃ) এর ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত

ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য দিল্লি থেকে নীলফামারীর ডোমারে আসা বিশিষ্ট অলিয়ে কামেল হযরত শাহ্ কলন্দর (রহঃ) এর পবিত্র ওরশ শরীফ উপলক্ষ্যে মাজার জিয়ারত, মান্নত গ্রহণ, তোবারক বিতরণ ও ঐতিহ্যবাহী কলন্দর মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১০ই মে) সকাল ৬টা থেকে উপজেলার সোনারায় দরগাহ্ শরীফ প্রাঙ্গনে বিশিষ্ট অলিয়ে কামেল হযরত শাহ্ কলন্দর (রহঃ) এর রুহের মাগফেরাত কামনায় পবিত্র ওরশ মাহফিল উপলক্ষ্যে তাঁর মাজার জিয়ারত করেন অসংখ্য ভক্ত ও সাধারণ মুসল্লিরা। এসময় ভক্তদের আনা মান্নত গ্রহণ এবং তোবারক বিতরণ করা হয়।

এছাড়া পবিত্র ওরশ মাহফিল উপলক্ষ্যে মাজার প্রাঙ্গনে তিনদিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী কলন্দর মেলায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে। দোকানিরা বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। শিশুদের জন্য নাগরদোলা, চরকি, যান্ত্রিক ঘূর্ণীয়মান রাইড, সাম্পান নৌকা বসানো হয়েছে।

মেলায় সন্দেশ, বাতাসা, জিলাপি, নিমকি, খাজা সহ বিভিন্ন মিষ্টান্ন দ্রব্যের দোকানে আগত দর্শনার্থীদের ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। অন্যদিকে কাঠের তৈরি খাট, পালংক, আলমারি, টেবিল-চেয়ার, ড্রেসিং টেবিল সহ লোহার তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রয় করছেন দোকানিরা। প্রায় কয়েক শতাধিক দোকান নিয়ে একপ্রকার বৈশাখী মেলায় পরিণত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কলন্দর মেলা।

হযরত শাহ্ কলন্দর (রহঃ) এর মাজার ও দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র ওরশ শরীফ ও ঐতিহ্যবাহী কলন্দর মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার বাহিনী সহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করেছেন। প্রতি বাংলা বছরের ২৬ ও ২৭ বৈশাখ তারিখে হযরত শাহ্ কলন্দর (রহঃ) এর পবিত্র ওরশ শরীফ পালন করা হয়।

মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতিবছর কলন্দর মেলায় ঘুরতে আসেন তারা। গ্রামীণ জনপদের বৈশাখী মেলার আয়োজন কমে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী কলন্দর মেলাকে প্রাধান্য দেন উত্তর জনপদের বাঙালিরা। এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটা সহ পরিচিতজনদের সাথে মিলনমেলায় মেতে ওঠা হয়।

সৈয়দপুর থেকে মাজার প্রাঙ্গনে আসা শফিক ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “আমার বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি, হযরত শাহ্ কলন্দর (রহঃ) এর পবিত্র ওরশ উপলক্ষ্যে ট্রেনে মাজারে আসা হয়। তাই পরিবার সহ আমিও এসেছি। অলিয়ে কামেলের মাজার জিয়ারত করে মান্নত করে উপকৃত হওয়ার পর থেকে আমরা মাজারে আসি। এটি আমাদের জন্য ঈদের মতো আনন্দ ও উৎসবের দিন।”

মেলাকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝেও ব্যাপক আনন্দের বহিঃপ্রকাশ পরিলক্ষিত হয়েছে। সোনারায় এলাকার আবির ইসলাম নামের এক তরুণের সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি দেখছেন- এই দিনটিতে সোনারায়ের প্রত্যেক বাড়িতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতরা আসেন। সবাই মিলে একত্রিত হয়ে আনন্দের ধারা প্রবাহিত হয়। উৎসবের মতোই পালন করা হয় বৈশাখের শেষ সপ্তাহের এই দিনটিকে।

জানা যায়, গত ৯ই মে শুরু হওয়া পবিত্র ওরশ শরীফের আনুষ্ঠানিকতা ১০ই মে সন্ধ্যা ৭টার পর শেষ হলেও পরদিন (১১ই মে) অব্ধি মেলাটি চলবে।

উল্লেখ্য, সূদুর দিল্লি থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য তৎকালীন রংপুর জেলার ডোমার স্টেশনের নিকটবর্তী সোনারায় এলাকার বন-জঙ্গলে আস্তানা গড়ে তুলেন হযরত শাহ্ কলন্দর (রহঃ)। তার অলৌকিক ক্ষমতায় ধীরে ধীরে অসংখ্য অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। আধ্যাত্মিক এই অলিয়ে কামেলের পরলোকগমনের দিনটিতে বহুবছর যাবৎ ওরশ শরীফ পালন করা হয়।

পত্রিকা একাত্তর/ রিশাদ