নড়াইলে এক সংখ্যালঘু পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিটে ছাড়ার অভিযোগ এনে এবং এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। জেলার লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর রাধা-গোবিন্দ সেবাশ্রমের সামনে নিপীড়নের বিরুদ্ধে নড়াইলের ব্যানারে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
এ সময় বক্তব্য দেন জেলা ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি আ্যাড. নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, নড়াইল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মলয় কুন্ডু, নিপীড়নের বিরুদ্ধে নড়াইল-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. বসিরুল হক, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মলয় নন্দী প্রমুখ।
জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের কৃষক পরিতোষ দাস (৬০), স্ত্রী গীতা দাস(৪৫) ও শ্বশুড়ী কমলা দাসী (১১০) ২৭মার্চ ভোরে সবার অজ্ঞাতে এলাকা ছেড়ে চেলে গেছে। যাওয়ার আগে তিনটা ছাগল ও তিনটা গরু একই গ্রামের আরফিন শেখের ছেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মিলন শেখের কাছে রেখে যায়। পরে ৪ এপ্রিল নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান নূরনবীর পূত্র হুসাইন মোল্যা ও গোলাম মোহাম্মদের পূত্র জহির মোল্যা পরিতোষ দাসের কাছে ৩০ হাজার টাকা পাবে এই কথা বলে মিলনের কাছ থেকে গরু ৩টি জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়। বিষয়টি বিভিন্ন মহলে জানাজানি হয়ে গেলে জহির ও হুসাইন গরু ফেরত দিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাঙ্গনডাঙ্গা গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় কায়েম আলীর ছেলে বেনজীরের কাছ থেকে একটি মেমোরি কার্ডে পরিতোষ দাসের স্ত্রী দু’সন্তানের জননী গীতা দাসের অশ্লিল ভিডিও পাওয়া যায়। এ ছবি নিয়ে হুসাইন ও জহির বিভিন্ন সময় তাকে ব্লাক মেইল, টাকা আদায় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল।
স্থানীয় দফাদার আবু আবদুল্লাহ জানান, পরিতোষ দাস বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পূর্বে স্থানীয় কয়েকজন মানুষ এ পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি ও ব্লাক মেইল করে আসছিল বলে জানান। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মিলন শেখ এ প্রতিনিধিকে বলেন, হুসাইন, জহির ও তাদের লোকজন আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক গরু নিয়ে যায়।
পরে অবশ্য বিভিন্ন চাপে ফেরত দিয়ে গেছে। ভূক্তভোগিদের সহযোগিতা পেলে এই দুস্কৃতিকারীদের শায়েস্তা করতে পারতাম। কিন্তু তারা সংখ্যালঘু বিধায় ভয়ে তারা কিছু করতে পারছেনা। তিনি আরও বলেন, শুনেছি পরিতোষ দাস, স্ত্রী ও মা এখন ছেলে পিযুস দাসের কাছে ঢাকায় রয়েছে।
এ বিষয়ে পরিতোষকে (০১৭২৭-৮৯৯৭১৮) ফোন করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হুসাইনের পিতা নূরুজ্জামান নূরনবী এ প্রতিনিধির কাছে ফোনে ছেলের দোষ অস্বীকার করে বলেন, এটা গ্রাম্য দলাদলি ও ভায়ে ভায়ের দ্বন্দ্ব। তাছাড়া গীতা দাসের চরিত্র নষ্ট এবং অনেকের কাছে টাকার দেনা রয়েছে। হুসাইন কোথায়, তার ফোন নম্বর দেন এ প্রশ্ন করলে বলেন, তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছি। জহিরের পিতা গোলাম মোহাম্মদ ও একই ধরনের মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে ওসি নাসির উদ্দিন জানান, প্রাথমিকভাবে দু’ভায়ের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি জানা গেছে। পরিতোষ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর এবং জোরপূর্বক গরু নিয়ে যাবার পর অশ্লিল ছবিসহ সামগ্রিক বিষয়টি সামনে এসেছে।
এ ব্যাপারে মামলা করতে পিরেতোষ ও তার পরিবারের সাথে কথা ফোনে অনেক বার কথা বলেছি। তারা কোন অভিযোগ করবে না বলে জানিয়েছে। তারা এখন ছেলের কাছে ঢাকায় রয়েছে। তবে অভিযুক্তরা পালিয়েছে বলে জানান।
পত্রিকা একাত্তর/ হাফিজুল নিলু
আপনার মতামত লিখুন :