বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ঈদ বাজার।অগ্নি সতর্কতায় মাইকিং করেছে ফায়ার সার্ভিস। উপজেলার পৌর পার্ক সংলগ্ন কাপুড়িয়াপট্টি বিপনী বিতান ও কসমেটিকসের দোকানগুলোয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। মোরেলগঞ্জ পৌর বাজারে ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেটের বড় বড় দোকানে সর্বত্র বিরাজ করছে নতুন আমেজের এক সাজ সাজ রব। ক্রেতা বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় ও পদচারণায় মুখরিত বাজারের প্রায় প্রত্যেকটি দোকান।
রবিবার দুপুরে সরজমিনে এসব দোকান ঘুরে দেখা যায়, বাজারের ছোট বড় অধিকাংশ দোকানেই তীল ধারনের ঠাই নেই। ক্রেতাধের মধ্যে পুরুষের তুলনায় এবার নারীদের সংখ্যা তুলনামুলক অনেক বেশি রয়েছে। বরাবরের মতো এবারো নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে দেশীয় তাঁত, নেট, সুতি, হাফ সিল্ক, ফুল সিল্ক, কাঁতান, জামদানি, বেনারসি, টাঙ্গাইল তাঁত, বালু ছড়ি, মীরপুরী সিল্ক, ঢাকাই মুসলিন ও ঢাকাই জর্জেট শাড়ী। এছাড়াও পাঞ্জাবী দোকানগুলোতে তরুণদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সুলতান, সুফী, এলিগান, সম্রাটসহ ভালো কালেকশানের পাঞ্জাবী।এ বিষয়ে মেসার্স ঠাকুর বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী উত্তম চক্রবর্তী আশ্রয় প্রতিদিনকে জানান, ১৫ রমজানের পর থেকে ক্রেতারা গার্মেন্টস আইটেম ও পাঞ্জাবী দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন বেশি।
করোনা মহামারীর কারণে গত কয়েক বছর ব্যবসায় তুলনামুলক লাভ না হলেও এবার বেচাবিক্রি ভালো বলেও জানান তিনি।এছাড়াও পনের রোজা পর্যন্ত মোরেলগঞ্জ বাজারে ঈদের পোশাকের বেচাকেনা একেবারেই ঢিলেঢালা থাকলেও বর্তমানে ক্রেতা সমাগম আর বেচাকেনা দুটোই বেড়েছে এ বছর।
তবে মোরেলগঞ্জের বিপণি বিতানগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে নারী ও শিশুদের বাহারি আইটেমের পোশাক,বাহারি রং ছাপার থ্রিপিস, ফ্রকের পাশাপাশি নারীরা কিনছেন শাড়িও। আর বরাবরের মতো ঈদে পুরুষের পছন্দ পাঞ্জাবি থাকলেও ,পাশাপাশি জিন্স প্যান্ট, শার্ট ও টি-শার্ট এর কদর বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাবসায়িরা। তবে গেল বছরের তুলনায় পোশাকের দাম বেশ চড়া বলছেন ক্রেতারা। অনেকেই ধার্যকৃত ঈদ বাজেটের বাহিরে চলে যাওয়ায় কম মূল্যের পোশাকের দিকে নজর দিচ্ছেন বলেও জানান ক্রেতারা।
উপজেলার সোনাখালী ছয় ঘর গ্রাম থেকে আসা সাধারন ক্রেতা টুম্পা বলেন, ‘আমার এবার যে ঈদ বাজেট ছিল, তা দিয়ে পরিবারের সবার জামা কাপড় কিনতে পারবো না। কারণ এবার সব কিছুরই দাম অস্বাভাবিক। কোন কিছুই হাতের নাগালে নেই। যে কারণে মার্কেটে এসেও সবার জন্যে কিনতে পারলাম না। গতবারের চেয়ে এবার দ্বিগুণ দাম বেশি। এভাবে চললে আমরা শেষ।
এদিকে নিন্ম আয়ের ক্রেতা রবিউল ফরাজী বলেন, ‘আমরা দিন আনি দিন খাই। আমাদের ঈদে দামি দামি কাপড় কেনা সম্ভব না। তাই ফুটপাতে মেয়ে ও ছেলের জন্যে একটা করে জামা কিনলাম। সব কিছুই দাম আকাশচুম্বী। গরীবের জন্যে নতুন জামা কাপড় না। স্ত্রী আর নিজের জন্যে কিছুই কিনতে পারবো না। এই ঈদ আমাদের জন্য নয়।এটা বড়লোকদের জন্য।অবশ্য দাম বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতারা জানালেন ভিন্ন কথা, তারা বলছেন পন্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায়, বঙ্গবাজারে আগুনে পোশাক পুড়ে যাওয়ায় পাইকারি বেশি দামে পোশাক কিনছেন তারা। ফলে খুচরা পর্যায়েও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত বারের চেয়ে এবার বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসছে বলেও জানান তারা, তুলনামূলক দাম বেশি থাকায় তেমন বেচা বিক্রি করতে পারছেন না বলেও জানান ব্যাবসায়িরা।
পৌর বাজারের নবাব গার্মেন্টসের স্বত্বাধীকারী মোঃরবিউল ইসলাম বলেন, এবার বেচাকেনা তুলনামুলক কম। এবার বেশি দামে আমাদের পন্য কিনতে হয়েছে। ফলে খুচরা দামও একটু বেশি। যে কারণে গতবার দেদারসে মালামাল বিক্রি করলেও, এবার তার অর্ধেক।ক্রেতা আসে ঘুরে ফিলে চলে যায়। দামে বনিবনা না হওয়ায় কিনে না। আমাদের ব্যাবসা এবার ভীষণ মন্দা। এভাবে চললে অনেক মাল থেকে যাবে। তিনি আরও বলেন, মার্কেটগুলোতে এবার লেডিস কালেকশন বেশি রাখা হয়েছে এর মধ্যে নায়রা, সারারা ও গারারা পোশাক সর্বনিম্ন আড়াই হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে শিশুদের জামা কাপড় তুলনামূলক বেশি বিক্রি হচ্ছে। কারণ শিশুদের ঈদে আনন্দের পরিমাণ বেশি থাকে।
এদিকে বিভিন্ন গার্মেন্টস ব্যাবসায়িরা কম বেশি বেচাকেনা করলেও ক্রেতা মিলছেনা মার্কেটের শাড়ি লুঙ্গির দোকানে,বাজারের ঐতিহ্যবাহী শাড়ী ও লুঙ্গি ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান ব্যাপারী বস্ত্রালয়ের বিক্রেতারা জানান, আমাদের ব্যবসায় ভালো যাচ্ছে না।আগে মানুষ ঈদে শাড়ি লুঙ্গি ব্যাবহার করলেও বর্তমানে খুবই কম লোকে শাড়ি লুঙ্গি পরিধান করেন, তাছাড়া বর্তমানের দ্রব্যমুল্যর উর্ধগতির কারনে ধনি বেক্তিরা পর্যাপ্ত যাকাতও দিচ্ছে না। এছাড়াও বেশিরভাগ ক্রেতাই গার্মেন্টস পন্যের দিকে নজর দিচ্ছেন।
অপরদিকে ঈদকে সামনে রেখে বড় ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে জনবহুল এসব এলাকায় মোরেলগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের একটি প্রতিনিধি দল মোরেলগঞ্জ উপজেলার পৌরবাজারের প্রধান প্রধান সড়ক ও মার্কেটে অগ্নি সচেতনতা মূলক জরুরী বার্তা মাইকে প্রচার করতেও দেখা যায়। এবং প্রত্যেকটি মার্কেটে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করার লক্ষে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মোরেলগঞ্জ ফায়ার হাউজ ইন্সপেক্টর প্রবীর কুমার দেবনাথ।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা মোরেলগঞ্জ বাজারকে একটি অগ্নি ঝুকিপূর্ণ বাজার হিসেবে চিন্হিত করে বাজার কমিটিকে একটি চিঠি দিয়েছি, যাতে তারা বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে অগ্নি নির্বাপনের সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। এছাড়াও আমরা সকল দোকান মালিককে অগ্নি নিরাপত্তায় সকল ধরনের পরামর্শ প্রদান করে চলেছি।পাশাপাশি মোরেলগঞ্জ থানার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উপজেলায় প্রতিটি দোকানে ঈদের বেচা-বিক্রি যাতে নির্বিঘ্নে চলে সে দিকেও প্রশাসন কঠোরভাবে নজরদারী রাখবে বলে অভিমত ব্যাক্ত করেন।
পত্রিকা একাত্তর/ নাজমুল