বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফল হকের ৪৩ তম প্রয়াণ দিবস


উপজেলা প্রতিনিধি, ডোমার প্রকাশের সময় : ০৮/০৪/২০২৩, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ /
বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফল হকের ৪৩ তম প্রয়াণ দিবস

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ডোমার থানা আওয়ামী মুসলিম লীগের সর্বপ্রথম সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফল হকের ৪৩তম প্রয়াণ দিবস আজ।

১৯১৩ সালের ২রা ডিসেম্বর নীলফামারী মহকুমার ডোমার থানার ঐতিহ্যবাহী চিকনমাটি পশ্চিম ধনীপাড়া গ্রামে মৃত নজমুদ্দিন সরকার ও জ্ঞানা বেওয়ার কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফল হক। তিনি ১৯৭৯ সালের ৭ই এপ্রিল নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।

ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা লুৎফল হক ১৯৭৯ সালের ২৩শে জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে, ডোমার থানা আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ অব্ধি তিনি ডোমার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।

৫৪’র ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ডোমার ডাকবাংলোতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নির্বাচনী জনসভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি। কাগমারী সম্মেলনের পর ১৯৫৭ সালে আগস্ট মাসে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনকার সাবেক মন্ত্রী খয়রাত হোসেন সহ রেলগাড়ী করে সাংগঠনিক সফরে লুৎফল হকের বাড়িতে আসেন। এখানে গোসলের পর নাস্তা করে মোটরসাইকেল যোগে জলঢাকা জামসেদ আলীর বাড়িতে দুপুরের খাবার ও সাংগঠনিক যোগাযোগ শেষে কিশোরগঞ্জ হয়ে সৈয়দপুর রেলস্টেশন এসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

৬৬’র ছয়দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে দলের পক্ষে সক্রিয়ভাবে দায়িত্বপালন করেন তিনি। ১৯৭০ সালের ২৩শে অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে ডোমার উপজেলা পরিষদ মাঠে তৎকালীন ছাত্রনেতা ও সাবেক এমপি আব্দুর রউফ’র নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে জনসভার সভাপতিত্ব করেন।

একই বছরের ৩রা মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবসে ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফল হকের নেতৃত্বে ডোমারে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা বাস্তবায়নে তাঁর অর্থায়নে পাকসেনা প্রতিরোধ করার জন্য ডোমার ডাকবাংলোতে আনসার, মুজাহিদদের সংগঠিত করে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।

পরবর্তীতে পাকবাহিনী প্রতিরোধে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণের সময় ডোমার বাজার সংলগ্ন তৎকালীন জিন্নাহ মেমোরিয়াল হল (বর্তমানে শহীদ ধীরাজ-মিজান স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তন) প্রাঙ্গণে আনসার ও মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যবৃন্দকে নিয়ে মিনি ক্যাম্প স্থাপন করে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। এসময় চিলাহাটি, নীলফামারী ও সৈয়দপুরে যোগাযোগের জন্য তাঁর টেলিফোনটি স্থাপন করে তা ব্যবহার করা হয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ ধীরাজ-মিজান স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তনে তিনিই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর ২৬শে মার্চ ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাঁর নেতৃত্বে লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আহবানে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুজিবনগর সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভারতের হলদিবাড়ী দেওয়ানগঞ্জ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবিরে এলাকার যুবকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, সাহস ও শক্তি যোগাতেন।

পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যে অশুভ রাজনৈতিক তৎপরতা সৃষ্টি হয়েছিল, সেসময়েও তিনি নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে অটল ছিলেন।

তিনি শুধুমাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রেই নয় ডোমারের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের প্রাণপুরুষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ডোমার নাট্য সমিতি, শহীদ আনজারুল হক (ধীরাজ) পাঠাগার, ডোমার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর অমর স্মৃতির প্রতি ‘পত্রিকা একাত্তর’ পরিবারের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

পত্রিকা একাত্তর/ রিশাদ