মৃত্যু সম্পর্কিত বই পড়ে ‘চিলাহাটি’র সিয়ামের আত্মহত্যা


জেলা প্রতিনিধি, নীলফামারী প্রকাশের সময় : ০৫/০৪/২০২৩, ৭:০৮ অপরাহ্ণ /
মৃত্যু সম্পর্কিত বই পড়ে ‘চিলাহাটি’র সিয়ামের আত্মহত্যা

নীলফামারী জেলার চিলাহাটি’র ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের দলিল লেখক আতিকুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আরাফাত সিয়াম গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মীর মোশারফ হোসেন হলে তার নিজ রুমে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

আজ বুধবার সকালে তার লাশ এম্বুলেন্সে তার গ্রামের বাড়িতে আনার পর পারিবারিকভাবে তার জানাযা সম্পন্ন করা হয়।
জানা গেছে- সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলো।

আরাফাত আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে মৃত্যু সম্পর্কিত একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, যা আত্মহত্যা ইঙ্গিত করে। তিনি মেডিটেশন করতেন বলেও তার পোস্ট থেকে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকাল থেকে আরাফাতের রুম ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায়ও বন্ধ দেখে একজন শিক্ষার্থী এসে রুমে ধাক্কা দেন। পরে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন আরাফাতের দেহ ঝুলছে। এর পর দরজা ভেঙে বের করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আলম, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান, রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কানিজসহ প্রশাসনে দায়িত্বরত একাধিক শিক্ষক খবর পেয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে ছুটে আসেন।

চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক বীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে আমাদের এখানে আনা হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখি সে আগেই মারা গেছে। আমরা যখন মরদেহ পাই, তখন দেখেছি রশি গলার মধ্যে গেঁথে আছে, ফাঁস লেগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

আরাফাত রহমান আত্মহত্যার আগে সোমবার রাত ৪টা ২৫ মিনিটে তার ফেসবুক ওয়ালে (Arafat Siam) একটি স্ট্যাটাস দেন। ‘অন দ্য ওয়ে টু ইটারনিটি’ শিরোনামের ওই পোস্টে বলা হয়, ‘আজ আমি আমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। এটি একটি স্বর্গীয় মুহূর্ত। বহুদিন ধরে আমি মেডিটেশন করি। আজকেও অন্যান্য দিনের ন্যায় মেডিটেশনে থাকার সময় কেঁপে উঠি। এ অবস্থায় আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পাই। আমাদের দেহ মূলত সীমাবদ্ধ কিন্তু আত্মা অসীম।

আর আত্মাই হচ্ছে মূল শক্তি। মৃত্যুতে এর কিছু হয় না। জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে হলে আগে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়। মৃত্যুকে ভয় পাওয়া উচিত নয়। আমি এখন জীবনের স্বাদ আস্বাদন করার জন্য প্রস্তুত। আমি জানি পৃথিবীর সকলেই আমার বিরোধিতা করবে।

আরাফাত আরও লেখেন, আমি প্রায় সম্ভাব্য সব বই পড়েছি। ….কিন্তু একটা বিষয় জানা জরুরি যে, কেউ তোমাকে এটা শেখাতে পারবে না। ….জীবনকে বুঝতে হলে তোমাকে আগে মৃত্যুকে বুঝতে হবে। এটা সবকিছুর পরিসমাপ্তি। …যখনই তুমি মৃত্যুকে বুঝতে পারবে, তখনই তুমি জীবনের উদ্দেশ্য জানতে পারবে। ’

এদিকে আরাফাতের টেবিলে সদগুরু নামে ভারতীয় এক আধ্যাত্মিক গুরুর বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। বইটির নাম ‘ডেথ: আ বুক ফর অল দোজ হু শ্যাল ডাই’।

বইয়ের বিষয়বস্তু এবং ফেসবুক স্ট্যাটাসের ভাষ্য মিলিয়ে সহপাঠীরা বলছেন, এই ব্যক্তির বই ও লেকচার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন আরাফাত।

পত্রিকা একাত্তর/ শাহাজাহান বিপ্লবী