ঝিনাইদহে সুদখোরদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা ও সদর উপজেলা থেকে চিহ্নিত ১১ সুদখোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। অনেক সুদখোর পুলিশী অভিযানের মুখে গাঢাকা দিয়েছে। তবে কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও কালীগঞ্জ জেলায় এই অভিযান শুরু না হওয়ায় সেখানকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো হা-হুতাশ করছে।
এদিকে ঝিনাইদহের চিহ্নিত এনজিওগুলো চড়াহারে সুদ ব্যবসার পাশাপাশি চাকরী দেওয়ার নামে ব্যাংক চেক ও জমানত হিসেবে টাকা গ্রহন করছে। এটি অবৈধ ও বেআইনী হলেও এনজিও নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ঝিনাইদহ স্বর্ণকার পট্টিতে গহনা বন্ধক রেখে কতিপয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুদে কারবারী চালিয়ে গেলেও দেখার কেউ নেই।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলায় সুদখোরদের অত্যাচার বৃদ্ধি ও ঋনের ভারে আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশ সাড়াশি অভিযান শুরু করে। শৈলকুপা উপজেলায় প্রথম এই অভিযান শুরু করা হয়।
এরপর ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ডুতে গ্রেফতার অভিযান চলে। গত চার দিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এরই মধ্যে ১১ সুদখোরকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে শৈলকূপা উপজেলা থেকে ৬ জন, ঝিনাইদহ সদর থেকে ৪ জন ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা থেকে একজনকে আটক করে পুলিশ। এসব সুদে কারবারিরা দীর্ঘদিন ধরে ফাকা স্টাম্প ও চেকের পাতায় স্বাক্ষর করিয়ে চড়া সুদে অভাবি মানুষদের টাকা ধার দিয়ে আসছে। ধারের অর্থ পরবর্তীতে তাদের গলার কাটা হয়ে দাড়ায়। এক পর্যায়ে আসল তো দুরের কথা জীবন ভর সুদের টাকা শোধ করতে না পেরে গ্রাম ছাড়া নয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
এ অবস্থায় সুদ কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান শুরু হওয়াতে মানুষ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। পুলিশের এই অভিযানের শুরু হওয়াতে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ানো সুদখোররা গাঁ ঢাকা দিয়েছে। একই সাথে সুদখোরদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে ভুক্তভোগী মানুষগুলো।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ বছরে শৈলকুপার দহকুলা গ্রামের ফার্মেসী ব্যবসায়ি ইতাহার আলী, গাড়াগঞ্জের ব্যবসায়ি আরজু মিয়া, ফুলহরি গ্রামের বিদ্যুৎ চৌধুরীও মঙ্গল কুন্ডু, মালিথিয়া গ্রামের তন্ময়মন্ডল ও চরমালিথিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বিষ্ণু মন্ডল সুদখোর মহাজনদের টাকা পরিশোধে ব্যার্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এমন ঘটনা শুধু শৈলকুপায় নয় অন্যনান্য উপজেলাতেও ঘটছে। ইতিমধ্যে শৈলকূপার হরিহরা গ্রামের মৃত আব্দুল বিশ্বাসের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, ব্রাহিমপুর গ্রামের মৃত খোরশেদ মোল্লার ছেলে আমজাদ হোসেন, বারইপাড়া গ্রামের মৃত আবুল শেখের পুত্র রহিম শেখ, শেখপারা গ্রামের শহর আলী শেখের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান, ভাটই বাজারের আব্দুস সালামের পুত্র পলাশ হোসেন ও চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মন্ডলের পুত্র পিয়ার আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে হরিণাকুন্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া বাজারে অভিযান চালিয়ে কুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত গোলাপ মন্ডলের ছেলে সুদে কারবারি আলতাফ মন্ডল গ্রেপ্তার করা হয়। ঝিনাইদহ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে শহরের পবাহাটি থেকে মৃত ওয়াদুদ মোল্লার ছেলে রফিকুল ইসলাম বিশু, পাগলাকানাই কোরাপাড়ার মিজানুর রহমানের স্ত্রী স্বপ্না বেগম ও তার পুত্র ইমন ও হামদহ এলাকা থেকে আইয়ুবকে গ্রেফতার করে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহম্মদ সোহেল রানা জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাক্তির নিকট হতে নেয়া স্বাক্ষর করা সাদা স্টাম্প ও চেক উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান জানান, সুদখোর মহাজনদের কবলে পড়ে অভাবি ঋনগ্রস্থ মানুষরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন এমন সংবাদ তাকে ব্যাথিত করেছে। যে কারনে তিনি এ বিষয়টিকে আমলে নিয়ে সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে জেলায় পুলিশি অভিযান শুরু করেন।
তিনি জানান গত দুই দিনে ১০ জন চিহ্নিত সুদেকারবারীকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন যতদিন না সুদখোর মহাজনদের এই অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ না হবে ততদিন এই অভিযান অভ্যাহত থাকবে। তিনি এ বিষয়ে জেলা পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ঝিনাইদহের সকল শ্রেনী-পেশার মানুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
মাহফুজুর রহমান