ভুয়া সমিতির ফাঁদে ৪ দিনেই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র


উপজেলা প্রতিনিধি, মোরেলগঞ্জ প্রকাশের সময় : ০৬/০২/২০২৩, ৫:১১ অপরাহ্ণ /
ভুয়া সমিতির ফাঁদে ৪ দিনেই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আবারও ভুয়া সমিতির প্রতারনার শিকার হয়েছেন শতাধিক সহজ সরল নারী ও পুরুষ। জানা যায়, এসকল নারী পুরুষকে সহজ শর্তে ঋন দেয়ার নাম করে ভুয়া সমিতি সংস্থার একদল সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে।

এদিকে প্রতারকদের প্রতারনার ফাদেঁ পা দিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে অসহায় নিরীহ সহজ সরল এই খেটে খাওয়া দীনমজুর মানুষেরা। উত্তর বারখালীর হাজী ইব্রাহিম সৃতি দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকার গৃহিণী লাবনি আক্তার, জানান গত ৪/৫ দিন আগে ”দীন ওয়েলফেয়ার”সোসাইটি নামে একটি এনজিও সংস্থার কর্মী দাবী করে ২/৩ জন লোক মোরেলগঞ্জ বাজার বালুর রাস্তা পয়েন্টে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে অফিস খোলে। তারা প্রথমেই স্থানীয়ভাবে কয়েক’ জন মহিলা ও পুরুষ মাঠ কর্মী হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া করে।

তাদের লোভনীয় অফার ও ভালমানের বেতনের কথা শুনে কয়েকজন সম্মতি দিলে ২০ হাজার টাকা জামানতে চাকুরী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। পরে মোঃ খলিলুর রহমান নামে (ম্যানাজার) ব্যক্তি তার সীল স্বাক্ষরযুক্ত সঞ্চয় ও ঋণের পাশ বই তৈরী করে মোরেলগঞ্জ, বারইখালী, বহরবুনিয়া , ফুলহাতা ঘষিয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকার মহিলা পুরুষের নামে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সদস্য সংগ্রহ করেন। প্রায় ১০০ জন সদস্য তৈরী করে তাদের কাছ থেকে প্রথম পর্যায়ে ৬শ টাকা সঞ্চয় হিসেবে নেয়া হয়। এ ব্যাপারে ম্যানাজার খলিলুর রহমানের সীল স্বাক্ষর যুক্ত পাশ বহি সদস্যদের দেয়া হয়।

গত শুক্রবার উক্ত ম্যানাজার সদস্যদের জানায়, তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দু’দিনের মধ্যে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই মতে যিনি ১ লাখ টাকা ঋণ নিবেন তার বিপরীতে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় এবং ২ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় রবিবারের মধ্যে জমা দিতে হবে। যারা ওই সময়ের মধ্যে সঞ্চয়ের টাকা জমা দিবেন তাদেরকে ২ দিনের মধ্যে ঋণ দেয়া হবে। এমন লোভনীয় অফার শুনে গ্রামের সহজ সরল মহিলারা ম্যানাজার খলিল ও তার সহকর্মীর নিকট সঞ্চয়ের টাকা জমা দেন।

তাদের মধ্যে রয়েছেন, বারইখালীর তুলাতলা কাশ্মীর এলাকার মোঃ লাভলু হাওলাদার, নেহার বেগম,পাখি আক্তার, সোনিয়া বেগম, শাহানুর, ছালমা বেগম, মোসাঃরাহিলা,ও সেলিনা বেগমসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় শতাধিক নারী পুরুষ।প্রতারক চক্রটি সদস্য ও ঋণের সঞ্চয় মিলে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা এক দিনে সংগ্রহ করেন দীন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার দাবীদার খলিলুর রহমান ও তার সহকর্মী। গতকাল সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারী ) সকালে সদস্যরা তাদের ঋণ গ্রহনের ফরম পুরণ করার জন্য অফিসে আসলে দেখা যায় অফিস তালা বদ্ধ।

রবিবার রাতেই চম্পট দেয় প্রতারকচক্রটি। অফিস রুমে ২টি চেয়ার ও ২টি টেবিল ব্যতিত আর কিছুই নাই। প্রতারনার শিকার ভুক্তভোগীদের হাতে দেয়া সঞ্চয় বহিঃ এর মধ্যে শুধুমাত্র সঞ্চয়েরর টাকা লিখা রয়েছে। আর ১০/২০ হাজার টাকার সঞ্চয়ের আলাদা রসিদ দেয়া হয়েছে। উক্ত পাশ বই এ লিখা রয়েছে “দীন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ” ( গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত). রেজিঃ নং এস-৯৮৯৮,সি-৯৭২০৪/১১, প্রধান কার্যালয়- বেলা নগর নরসিংদী, -১৬৪০।

উক্ত ভুয়া সমিতির শিকার হওয়া মোরেলগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের সহজ সরল অসহায় মহিলারা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন।এ ব্যাপারে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী সদস্যরা মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এস, এম তারেক সুলতান এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানান, তাছাড়াও ভুক্তভোগীদের বাগেরহাট জেলায় একটি লিখিত অভিযোগ পত্র দায়ের করার পরামর্শও দেন তিনি।

উল্লেখ্য এর আগেও আরও একাধিক জায়গায় এই ভুয়া সমিতি কোম্পানী এসে প্রতারনার মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।এর আগে ২৪ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত,HabiganjExpress.Com নামক একটি অনলাইন পোর্টালে , আলো ফাউন্ডেশন নামে হায়হায় কোম্পানির প্রতারণার খবরে নবীগঞ্জ বুরো এটিএম সালাম এর প্রতিবেদনে দেয়া আলো ফাউন্ডেশন সোসাইটির তথ্যে একই রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দেখা যায়, আলো ফাউন্ডেশন নামে হায়হায় কোম্পানীর প্রতারনা নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়,নবীগঞ্জে আবারও হায়হায় কোম্পানীর প্রতারনার শিকার হয়েছেন অর্ধ শতাধিক সহজ সরল নারী।

প্রতারনার শিকার মহিলাদের হাতে দেয়া সঞ্চয় বহিঃ এর মধ্যে শুধুমাত্র সঞ্চয়েরর ৬০০ টাকা লিখা রয়েছে। উক্ত পাশ বই এ লিখা ঠিকানা রয়েছে “আলো ফাউন্ডেশন” ( গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত). রেজিঃ নং এস-৯৮৯৮,সি-৯৭২০৪/১১, প্রধান কার্যালয়- ব্যাংক কলোনী, সাভার, ঢাকা-১৩৪০। উক্ত হায়হায় কোম্পানীর শিকার গ্রামের সহজ সরল অসহায় মহিলারা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। ইতি মধ্যেই প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

পত্রিকা একাত্তর/ নাজমুল