বাঘারপাড়ায় রাস্তা দখল করে সবজি চাষ:বিপাকে তিনটি পরিবার বিমাতা ভাই-ভাইপোদের অত্যাচারে তিনটি দরিদ্র পরিবার বিপাকে পড়েছে। বিমাতা ভাইরা ভিটের জমি ও চলাচলের রাস্তা দখল করে সেখানে লাউসহ তরিতরকারির চাষ শুরু করেছে।
ঘটনার এখানেই শেষ না, দখল স্থায়ী করতে ঐ ভাইয়েরা মাচা স্থাপন করেছেন। থানা, সমাজ কোথাও এই দরিদ্র তিনটি পরিবার সুবিচার পাচ্ছেনা। অভিযোগ উঠেছে একজন সরকারি কর্মকর্তা প্রভাব খাটিয়ে ঐ পরিবার তিনটিকে বিচার বঞ্চিত রাখছে। এমনকি ঐ বৈমাত্রেয় ভাইরা তাদের মৃত বোনের অবসর ভাতার ১৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার ষড়যন্ত্র করছে। এ ঘটনাটি যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার মামুদালীপুর গ্রামের।
জানা গেছে, ঐ গ্রামের আমেনা খাতুন ও তার এক ভাই এবং এক বোন পরিবার পরিজন নিয়ে বেকায়দায় পতিত হয়েছেন। ভিটের জমাজমির সাথে সাথে চলাচলের রাস্তাও বৈমাত্রেয় ভাইরা দখল করে নিয়েছেন। আমেনার স্বামী বদর মোল্যা পা ভ্যানে পাটখড়ি বিক্রি করেন। প্রতিদিন সকালে তিনি ভ্যান ও পাটখড়ি নিয়ে বের হয়ে যান আর রাতে ফেরেন। কিন্ত এখন তাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দখল করে নেওয়ায় তারা সপরিবারে চরম বিপদে পড়েছেন।
একদিকে ভিটের জমি জবর দখল করেছে। পাশাপাশি রাস্তা দখল করে নিয়েছে। একই সাথে প্রতিবাদ করলে আমেনা কে ঐ বৈমাত্রেয় ভাই ও তাদের সন্তানরা মারধোর করে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। আমেনার পিতার নাম আফতাব মন্ডল। তার চার বৈমাত্রেয় ভাই মোহাম্মদ, বাবর আলী মন্ডল, জালাল মন্ডল ও সাহেব আলী মন্ডল পরস্পর যোগসাজশে এই জবর দখল করেছেন বলে আমেনা খাতুনের অভিযোগ।
গ্রামবাসী ও ভূক্তভোগী জানায়, আমেনা জেএলনং-১০৮ মামুদালীপুর মৌজায় ৯৫১ দাগে ১৬ শতক, বোন কাজলের কাছ থেকে ক্রয় বাবদ আরো ১১ শতক, ৬৭৪ দাগে ৯ শতক, ৫১৬ দাগে ৬ শতক ও রাস্তা, ৬২৮ দাগে ২০ শতক ও কাজল বাবদ ক্রয়কৃত সাড়ে ১৩ শতক এবং ৬২৬ নং দাগে ৯ শতক জমি পাবেন ওয়ারেশ ও ক্রয় সূত্রে। কিন্ত বৈমাত্রেয় চার ভাই সেসব জমি জবর দখলের মাধ্যমে নিজেদের করায়ত্ত্বে রেখেছে।
আমেনার আপন বোন শাহেদা ২০২২ সালের বাংলা ৩ পৌষ তারিখে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি বরবাক বিদ্যালয়ের পেনশন সহ আনুষঙ্গিক প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা পাবেন। সেই টাকা আত্মসাৎ করতে ঐ চার বৈমাত্রেয় ভাই প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। অথচ টাকার সিংহভাগের দাবিদার বোন আমেনা, সাজেদা, শাহেদা ও ছোট আপন ভাই আখের। পৈত্রিক সূত্রে এসব জমি যেমন আমেনা পাবেন, তেমনি অংশ ক্রয় রয়েছে তার।
মামলা বাঘারপাড়া থানায় অভিযোগ করেও আমেনা জমির বুঝ পাচেছন না। একজন সরকারি কর্মকর্তা ঐ চার বৈমাত্রেয় ভাইদের পক্ষ নিয়ে সকল মহলকে প্রভাবিত করে আমেনা ও তার আপন ভাইবোনকে সুবিচার বঞ্চিত রাখছেন। মারুফ নামের ঐ কর্মকর্তা নড়াইল সদর উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুরের বাসিন্দা। আত্মীয় হলেও তিনি এক্ষেত্রে আপন ও বৈমাত্রেয় কে প্রাধান্য দিয়ে জবর দখলকারীদের পক্ষ নিচ্ছেন বলে গ্রামে অভিযোগ রয়েছে।
মামুদালীপুর গ্রামবাসী জানায়, প্রায় ওদের বাড়ি মারামারি হয়। আমেনা খাতুন দরিদ্র বলে তার বৈমাত্রেয় ভাই ও ভাইপো তাদের মানুষ বলে মনে করেনা। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর বাবর আলী, বাবর আলীর পুত্র লিটন হোসেন (২৮) ও অরব আলীসহ আরো লোকজন আমেনা, তার পুত্র ও পুত্রবধূকে মারধোর করে। এ বিষয়টি বাঘারপাড়া থানায় আমেনা খাতুন অভিযোগ দেয়। কিন্ত কোন ফলাফল আসেনি। এর আগে ২০১৯ সালের ৫ মে একটি শালিষ হয় যার লিখিত ডকুমেন্ট রয়েছে। কিন্ত আমেনার বৈমাত্রেয় ভাই-ভাইপোরা তা মানেনা। ওদের জমাজমির বিষয়টি নিয়ে বহুবার বসাবসি হয়েছে কিন্ত কেউই ফয়সালা করতে পারেনি। এখন শুনছি সার্কেল পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হচ্ছেন আমেনা। দেখি সেখানে সে প্রতিকার পায় কিনা।
পত্রিকা একাত্তর/ মোজাপ্ফার হুসাইন
আপনার মতামত লিখুন :