দীর্ঘ দুই বছর পরে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কালাচাঁদ আউলিয়ার মেলা


উপজেলা প্রতিনিধি, মোরেলগঞ্জ প্রকাশের সময় : ০৯/১২/২০২২, ৭:২৮ অপরাহ্ণ / ৪১
দীর্ঘ দুই বছর পরে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কালাচাঁদ আউলিয়ার মেলা

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দীর্ঘ দুই বছর পরে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কালাচাঁদ আউলিয়ার মেলা। মহামারী করোনার কারনে গত দুই বছর বন্ধ থাকার পরে আবারো শুরু হলো এ মেলা। প্রতি বছরের ন্যায় ২৫ শে অগ্রহায়ণ ৩ দিন ব্যাপি কালাচাঁদের এ মেলা অনুষ্ঠিত হয় । কালাচাঁদ মেলা নামকরনের পিছনে রয়েছে ব্যাপক ইতিহাস, লোকমুখে শোনা উক্ত চালাচাদ আউলিয়ার চেহারা ছিল খুব কালো এবং লম্বা যার কারনো তার নাম হয়েছে “কালাচাদ” একদিন অত্র স্থানের কতক ব্যক্তি স্বপ্নের মাধ্যমে দেখতে পান এখানে মেলা মিলানোর জন্য তখন থেকে শুরু হয় কালাঁচাদ আউলিয়ার মাজার মেলা।

মেলা আরম্ভের দুই তিন দিন আগে থেকেই এখানে প্রচুর লোক সমাগম শুরু হতে দেখা যায়। রাতভর চলে ওরশ, মুর্শিদী ও মাইজ ভান্ডারী গান। কালাচাঁদ ভক্তবৃন্দরা মাজারে আগরবাতি আর মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।কেউ কেউ বা মনের আশা পূরন হবার আশায় মাজার শরিফে মানত করে টাকা পয়সা দান করে থাকেন। মেলায় অনেক দোকানীদের মেলা প্রাঙ্গন ও তার আশপাশের এলাকার জায়গা জুড়ে বিভিন্ন পশরা সাজিয়ে বসতেও দেখা গিয়েছে ।

ঐতিহ্য ঘেরা দক্ষিনাঞ্চল সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ভক্ত ও আশেকবৃন্দ সহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও অনেক ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এসেছেন এ মেলা দেখতে ।বেশ কয়েক শত দোকানী, হাজার হাজার দর্শর্নার্থী ও ভক্তবৃন্দের উপচে পড়া লোক সমাগম ঘটেছে এ মেলায়। সরকারিভাবে উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধনে এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানা গেছে ।মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পদাধিকার বলে মেলা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।

২০০ বছরের বিটিশ শাসন আমলের ইতিহাসে বাংলার ঐতিহ্য সম্বলিত এক রহস্যময় কালাচাঁদের কাহিনী লোকমুখে ছড়ানো বিভিন্ন অলৌকিকতার নিদর্শন সত্যিই আবাক করার মতো, স্থানীয় বৃদ্ধদের থেকে শোনা কাহিনী আজও লোকমনে সৃষ্টি করে কল্পনার কেউ কেউ আবার বলে থাকেন ছোট অবস্থায় কালাচাঁদ আউলিয়া পানগুছি নদীতে ভেসে এসেছিল এবং বারইখালী নদীরপাড় ঘেষা কাজী বাড়ি এলাকায় আস্থানা গেড়েছিলেন তিনি। লোকমুখে রয়েছে তার বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক কাহিনী।

এসকল কাহিনীর মধ্যে রয়েছে, এক লোক শীতার্ত কালাচাঁদকে দেখে তার গাঁয়ের চাদর দিয়ে দেয়। কালাচাঁদ চাদরটি পেয়ে তার সামনে জলন্ত আগুনে ভিতরে ফেলে দিলে তা পুড়ে যায়। এতে ঐ লোকটি হতবাক হলে কালাচাঁদ জ্বলন্ত আগুন থেকে অক্ষত চাদরটি উঠিয়ে তাকে দিয়ে দেয়। সমসাময়িক সময়ে কালাচাঁদ আউলিয়া বাঘের পিঠে ঘুরে বেড়াত। তার হুকুম মতে এখনো পানগুছি নদী থেকে কুমির পানির উপর দিয়ে ভেসে যেতে হয়। বারইখালী ফকিরের তাকিয়া মৌজা তার নামেই হয়েছে বলে এলাকাবাসি জানায়।

বারইখালীর কাজী বাড়ির চত্বরে তিনি অস্তানা গাড়েন এবং এখানেই তিনি জ্যান্ত কবর নিয়েছিল। তার নামে এখানে প্রতিবছর মেলা বসে। হযরত কালাচাঁদ আউলিয়া মাজারের খাদেম শাহসুফি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছরে করোনার কারনে মেলার আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ প্রতি বছরেই ২৫ অগ্রহায়ন এই দিনটিতে ছুটে আসেন মেলা প্রাঙ্গনে। দূর দূরান্ত থেকে দোকান পাঠ মেলায় এসেছে । মেলা এ বছর জমজমাট হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি ।

এছাড়াও তিনি প্রশাসনের সহযোগীতা আশা করেন।এ ব্যাপারে মেলা কমিটির সভাপতি নির্বাহী কর্মকতা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উৎযাপনের জন্য প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। দর্শনার্থী আগত ভক্তবৃন্দসহ সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনী ও মেলা কমিটি সার্বক্ষনিক তদারকী করবে।

পত্রিকা একাত্তর/ নাজমুল