স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাসে ডিসেম্বর একটি গৌরবোজ্জ্বল মাস হিসাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে আসছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কাল থেকেই। ডিসেম্বর মানেই বাঙালির স্মৃতিচারণ। ডিসেম্বর মানেই বাঙালির অস্থি-মজ্জায় মিশে থাকা তীব্র প্রতিবাদী চেতনার এক বহিঃপ্রকাশ। ডিসেম্বর মানেই বাঙালির স্বপ্ন-সাধনা, ও আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের এক দৃষ্টান্তমূলক অধ্যায়।
১৯৪৭ সালের ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই সূচনা হয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এক বর্বরতার ইতিহাস। পূর্ব পাকিস্তানের নীরিহ বাঙালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যে শাসন, শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের কাল অধ্যায়ের সূচনা করেছিল, সেটি এক সময় চরমে পৌঁছালে পূর্ব বাংলার সাধারণ জনগণও তাঁদের বিরূদ্ধে স্বেচ্ছার হয়ে ওঠে। নিজেদের প্রতি হয়ে আসা বৈষম্যমূলক আচারণের বিরূদ্ধে ও নিজেদের স্বাধীকার আদায়ের লক্ষ্যে তাঁরাও দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে শুরু করে। যেটির ভিত্তি রচনা হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। তারপর ধারাবাহিকভাবে ১৯৫৪, ১৯৫৬, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ সালে আরো কিছু আন্দোলন ঘটে এবং যেটির অবসান ঘটে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে।
১৯৭১ সাল একদিকে বাংলার ইতিহাসে যেমন এক আতঙ্কের নাম, অন্যদিকে তেমনি এক গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়ও। দীর্ঘ নয় মাসের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, সশস্ত্র যুদ্ধ ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে পাকিস্তানি বর্বর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই ডিসেম্বর মাসেই চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন করে বাঙালি জাতি যে যুগান্তকারী অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছিল, সেটি বিশ্ব ইতিহাসে আজও এক বিরল ঘটনা।
এমনকি তৃতীয় বিশ্বের প্রথম সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশ হিসাবেও বাংলাদেশ একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান ধরে রেখেছে।
যেহেতু মুক্তিকামী বাঙালীদের পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসন, শোষণ, বৈষম্য ও নির্যাতনের চূড়ান্ত অবসান এই ডিসেম্বর মাসেই হয়েছিল। কাজেই বলা যায় যে, “বিজয়ের আরেক নাম ডিসেম্বর।”
পত্রিকা একাত্তর/ আনোয়ার হোসেন