হলের সিট দখলকে ছাত্রলীগের মারধর

স্টাফ রিপোর্টার

স্টাফ রিপোর্টার

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১ year আগে

হলের সিট দখলকে ছাত্রলীগের মারধর

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের দুই আবাসিক শিক্ষার্থীকে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে এই মারধর করেছে বলে জানা গেছে৷ এই ঘটনায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রক্টর ও হল প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী। মারধোরের শিকার ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান দোলন এবং আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তারেকুজ্জামান তারেক।

গত ৫ ই জুলাই মধ্যরাতে হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও শেরে-ই বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান দোলনকে ডেকে নিয়ে ক্যাম্পাসের মাঠে মারধোর করেন একাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ রুম্মান ইসলাম। গুরুতর আহত শিক্ষার্থী দোলনকে সেদিন রাতেই শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করান তার বন্ধুরা। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান মারধরের শিকার মাহমুদুল হাসান দোলন। ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে সিট দখলকে কেন্দ্র করে শেরে বাংলা হলের পঞ্চম তলায় আবাসিক শিক্ষার্থী এবং আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র তারেকুজ্জামান তারেককে মারধোর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সোহাগ, বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রাকিবুল হাসান। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দীন আহমেদ সিফাতের অনুসারী। সিফাতকে বঙ্গবন্ধু হল থেকে নামিয়ে দিলে শেরে-ই বাংলা হলের ৪০১৮ নং রুম অবৈধভাবে দখল করে আছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এ ঘটনার বিচার চেয়ে শের-ই বাংলা হলের প্রভোস্ট বরাবর গত ২৮ আগস্ট একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মারধরের ঘটনার সময় মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ৫ম তলার কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী।

ভিডিওতে দেখা যায় তারেকুজ্জামান তারেককে মারতে মারতে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসছেন অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন এবং সোহাগ। মারতে মারতে রুমের বাইরে নিয়ে এলে তাদের সাথে মারধরে যোগ দেয় আরেক অভিযুক্ত রাকিবুল হাসান। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগে বলেন, গত ২৩ শে আগস্ট মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে সঙ্গবদ্ধভাবে ৫০১৩ নং রুম ও আমার রুমের (৫০১২ নং রুম) সামনে আমার উপর নির্বিচারে হামলা, মারধর ও নির্যাতন চালায় গণিত বিভাগের দেলোয়ার (কক্ষ নং ৫০০১), মার্কেটিং বিভাগের সোহাগ (কক্ষ নং২০০৩) এবং বাংলা বিভাগের রাকিবুল হাসান (কক্ষ নং ৫০০৯) । অভিযোগপত্রে আরও বলেন, উক্ত ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। তদন্তপূর্বক এর সুষ্ঠু বিচার চাই৷"

প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, ঐদিন রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে দেলোয়ার ও সোহাগ বিভিন্ন রুমে গিয়ে সিট ফাঁকা আছে কি না তল্লাশী করে৷ এক পর্যায়ে ৫০১২ নং কক্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে বেধম মারপিট করে৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল প্রশাসনকে অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান ৷ শেরে বাংলা হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ ছাত্রদের জন্য হল এখন আতঙ্কের নাম। বেশ কিছুদিন ধরে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা কর্মী হলের বিভিন্ন রুমে রুমে গিয়ে ফাঁকা সিট আছে কিনা এমন খোঁজখবর নিচ্ছে।

বিভিন্ন সময় জোরপূর্বক ফাঁকা সিটে অবৈধভাবে ছাত্র উঠাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে আছি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেনের বলেন, আমি ওই আবাসিক হলের ছাত্র কিন্তু আমি এই মারামারির বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমি ঐদিন হলে ছিলাম না এবং মারামারির সাথে জড়িত ছিলাম না।

অভিযুক্ত সোহাগ বলেন, আমি মারামারির সাথে জড়িত নই। এরকম কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা তাও আমার জানা নেই। এগুলো মিথ্য অভিযোগ। আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ রুম্মান ইসলামের কাছে মাহমুদুল হাসান দোলনকে মারধরের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব তথ্য আপনি কোথায় পেয়েছেন, যেখান থেকে এই তথ্য পেয়েছেন তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন। এসব বিষয়ে কথা বলার মতো সময় আমার নেই।

শের-ই বাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া বলেন, কতিপয় শিক্ষার্থী কর্তৃক ২ জন আবাসিক ছাত্রকে মারধরের ঘটনা শুনেছি। একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হল প্রশাসন থেকে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর ছাত্র উঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। হলে সিট বরাদ্ধ দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র হল প্রশাসনের।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, আমি মাহমুদুল হাসান দোলনের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি, আর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে প্রয়োজনে আর সময় লাগতে পারে এবং দ্বিতীয়বার গত ২৩ শে আগস্টের ঘটনার বিবরণে তার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পত্রিকা একাত্তর /আবদুল আল মামুন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news