দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সমূহের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ অর্জনকারী ১৭৮ শিক্ষার্থী এবার ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক’ পাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের ৩৭টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশসেরা এসব শিক্ষার্থীকে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৯ সালে ফলাফল হওয়া এসব শিক্ষার্থীদের পদক দেয়া হচ্ছে।
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবার ৪ শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পাচ্ছেন। তবে কৃষি অনুষদের কোনো শিক্ষার্থী পাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক।
জানা গেছে, কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক এর জন্য মনোনীত হন। কিন্তু সেই সেশনের ফলাফলে মার্ক টেম্পারিং এর অভিযোগ পাওয়া যায়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন বিভাগের চেয়ারম্যান এইচএম আনিসুজ্জামানকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির পাশাপাশি গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। বিভিন্ন সময়ে সেই তদন্ত কমিটির সদস্যদের সাথে কথা বলে মার্ক টেম্পারিং এর প্রমাণ পাওয়া গেছে জানানো হলেও প্রায় এক বছরেও তদন্ত কমিটির ফলাফল প্রকাশিত হয় নি, সমাধান হয় নি সে ঘটনারও। ফলে অনুষদের সর্বোচ্চ ফলাফল করে পদকের জন্য মনোনীত হয়েও প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পাচ্ছেন না কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার। আবার মার্ক টেম্পারিং সমস্যা হয়ে থাকলেও নতুন ফলাফল বা এ সংক্রান্ত সমাধান না করার জন্য এই অনুষদের কোনো শিক্ষার্থীই পাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক।
ক্ষোভ প্রকাশ কৃষি বিভাগ থেকে স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার বলেন, আমি আমার জীবনের একটা এতো বড় অর্জন হারালাম। তদন্ত শেষ করে একটা ফলাফল দিলে আমি এ টানাপোড়েন থেকে মুক্তি পেতাম।
এ বিষয়ে একাডেমিক শাখা প্রধান ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। সবার নাম আমরা যথাসময়ে যথা নিয়মে ইউজিসিতে পাঠিয়ে দিয়েছি। কৃষি অনুষদের বিষয়ে জটিলতা থাকায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না থাকায় একটা নাম পাঠানো যায় নি।
এ বিষয়ে মার্ক টেম্পারিং এর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ সালেহ আহমেদ বলেন, “আমি পরে যুক্ত হয়েছি। যুক্ত হওয়ার পর মিটিংয়ে যাই নি”। এ সময় তিনি মিটিংয়ে থাকা অন্যদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান জাকিয়া সুলতানা মুক্তা বলেন, তদন্ত কমিটির সভাপতি, সদস্য সচিবকে বারবার বলেছি এমনকি আমি উপাচার্যকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি,কিন্তু উনারা মিটিং বসান নাই। মোজাহার স্যার চলে গেছেন অনেকদিন হয়েছে, কিন্তু উনারা ইচ্ছাকৃতভাবে গড়িমসি করছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও প্রক্টর ড. মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আমরা কয়েকবার মিটিংয়ে বসেছি। সে সময় কিছু তথ্য প্রমাণ পেলেও পরবর্তীতে বিভাগ থেকে তা পাঠানোর কথা বলা হলেও সেটি দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করেছে।
ইচ্ছাকৃত গড়িমসি করা হচ্ছে কিনা এমন প্রসঙ্গে কলা অনুষদের ডিন ও তদন্ত কমিটির সভাপতি আশিকুজ্জামান ভূইয়া বলেন, “এখানে আমি বা সদস্য সচিব বা উপাচার্য গড়িমসি করে লাভ কি? এখানে আরো সদস্য আছে। আমরা আগামী সপ্তাহে মিটিং করবো এ বিষয়ে”।
উপাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে গড়িমসি করা হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, “ইচ্ছাকৃত গড়িমসি আমরা কেন করবো? উনার চোখ একটা, দুইটা না”।
পত্রিকা একাত্তর/ কে.এম. ইয়ামিনুল
আপনার মতামত লিখুন :