৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বাংলাদেশেও প্রতিবছর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে এ দিনটি। বর্তমান সমাজে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছে সমানতালে। এ সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে নারীর অবদান রয়েছে। তবুও নারীরা আজ ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়, দিন দিন বেড়েই চলছে নারীর প্রতি সহিংসতা।
এদেশে এখনো নারীরা একা পথ চলতে ভয় পায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই কুৎসিতরূপী ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা। উচ্চশিক্ষা অর্জনে ও নারীরা বাধার মুখে পড়ছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের নারীরা। নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের কাজের প্রশংসা, ভালবাসা প্রকাশ করে এই দিনটিকে পালন করা হয়। নারী দিবস উপলক্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শিক্ষার্থীর ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছে পত্রিকা একাত্তর । শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন মোঃ ফারহান সাদিক সাজু।
“নারী শুধু জনসংখ্যা নয় সম্ভাবনাময় বিশ্ব জনশক্তিও বটে”
৮ই মার্চ হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস।বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায়ই অর্ধাংশ নারী।সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে অর্থাৎ জাতীয় -আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও নারীর সমঅধিকার, সমআত্মমর্যাদা এবং অসম শ্রম মজুরির প্রতিবাদের জন্যই দিনটি বিশ্বের ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে আছে।মূলত ১৮৫৭ সালে শ্রমজীবী নারীদের শিল্পকারখানায় শ্রমের সময় কমানো, শ্রম মজুরীর বৈষম্য, কাজের অমানবিক পরিবেশ সহ নানাবিধ দাবিকে কেন্দ্র করেই নারী শ্রমিকেরা রাজপথে নেমে পড়ে।যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। যার চূড়ান্তরূপ আজকের বিশ্ব নারী দিবস।আন্দোলনের পালাক্রমে ১৯১৪ সালের ৮ই মার্চ কে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে মর্যাদা প্রদান করা হয়। মোটকথা নারী সম্প্রদায় কে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অংশগ্রহণের পুরোপুরিভাবে সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নারীরা সুদূরপ্রসারী অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
নারী দিবসে অঙ্গীকার হোক,তথাকথিত পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে পুরো নারীসমাজ মুক্তি পাক।নারীরা ধরিত্রীতে বেঁচে থাকুক মানুষ হিসেবে, সৃষ্টির মহান অংশ হিসেবে, স্বাধীন ও আত্মমর্যাদা নিয়ে পুরুষের সহযোগী হয়ে উন্নয়ন ও সম্ভাবনাময় বিশ্ব গড়ার পাথেয় হিসেবে। অবশেষে বলতে চাই,
“নারীরা যুগযুগ ধরে দিয়েছে প্রেরণা-
গড়েছে সভ্যতার অম্লান ইতিহাস।
তাইতো নারী আজ বিশ্ব সম্ভাবনার সারথি।”
জাকের হোসেন পাশা/ রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ
“নারী মানেই হাজারো শক্তির উৎস”
নারী শব্দটি ছোট কিন্তু এই শব্দটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশাল। নারীর সবচেয়ে বড় শক্তি ও কৃতিত্ব হলো তার মাতৃত্ব আর এখানেই একজন নারীর প্রাপ্তি। আর এই মাতৃত্বের সাধের কারনেই একজন নারীকে দেওয়া হয় আলাদা মর্যাদা ।নারী মানেই হাজারো শক্তির উৎস। নারীর অস্তিত্ব আছে বিধায় মানুষের গভীর জীবনবোধ সম্পর্কে জানা যায়।একজন নারী তার অদম্য শক্তি ও ভালোবাসার দ্বারা একটি সর্পিল পথকে সহজ পথে রুপান্তরিত করতে পারে। নারীর এই অসাধারণ কৃতিত্ব ও ভালোবাসার প্রতি সম্মান রেখে প্রতি বছর ৮ মার্চ পালন করা হয় বিশ্ব নারী দিবস। প্রদর্শন করা হয় নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি। বাড়িয়ে দেওয়া হয় নারীর আত্মমর্যাদা। আমরা প্রত্যেকে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব এবং তাদের ভালোবাসাগুলো যথাযথ সম্মান করব।
লিখা খাতুন
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
“ক্যাম্পাসে নারী সাংবাদিকদের প্রতিবন্ধকতা”
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতাকে আঁতুড়ঘর বলা হয়।যেখানে পুরুষের তুলনায় জন্ম নেওয়া নারীর সংখ্যা অতি নগন্য।বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ বিষয়ে অধ্যয়ন করলেও পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে গ্রহন করেন না অনেক নারী। নারীরা সাহস নিয়ে এই পেশায় আসলেও নানা সমালোচনার মুখে টিকে থাকতে পারেন না। কারণ, নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্রের অভাব থাকায় তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। আবার প্রভাবশালী কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর তাঁদেরকে নানা ঝুকিতে পড়তে হয়।আর জীবনের নিশ্চয়তার জন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নারীরা এই পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করতে চান না।
একটা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যেমন ছেলে-মেয়ে উভয় শিক্ষার্থী প্রয়োজন তেমনি একটা ক্যাম্পাসের ভাবমূর্তি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পুরুষের পাশাপাশি নারী সাংবাদিকের কর্মক্ষেত্রের বিকল্প নাই।
ক্যাম্পাসে নারী সাংবাদিকতা পেশাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সঠিকভাবে মূল্যয়ণ করে,নারীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী এবং নারী সাংবাদিকদের জীবনের নিশ্চয়তা দানের জন্য প্রশাসন কর্তৃক দায়ভার গ্রহনের মাধ্যমে নারী সাংবাদিকদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি।
তবে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ সুবিধা ও অনেক। প্রথমত, সততার সাথে যেকোনো বিষয় তুলে ধরার মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যতা ও নেতৃত্বদানের সুযোগ তৈরি হয়।আবার খুব কম সময়ের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পাশাপাশি লেখালেখির মাধ্যমে নারী নিজেকে খুব সহজেই বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করতে পারে।
তাসলিমা জান্নাত
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ
পত্রিকা একাত্তর/ ফারহান সাদিক সাজু