মৎস্য অফিসকে ম্যানেজ করেই অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার

স্টাফ রিপোর্টার, গোমস্তাপুর

২৪ আগস্ট, ২০২২, ১ year আগে

মৎস্য অফিসকে ম্যানেজ করেই অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার

মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন১৯৫০এর ধারা ৩ মোতাবেক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৬ অক্টোবর মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ বিধিমালা১৯৮৫প্রণয়ন করেন। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার মাছের প্রজাতি, আকার, প্রজননকাল ও বিচরণক্ষেত্র, মৎস্য আহরণকাল ও আহরণ সরঞ্জামাদির ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করে।

কিন্তু কিছু অসাধু জেলে সেই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দেদারসে মাছ শিকার করেই চলেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মহানন্দা ও পূণর্ভবা নদীতে অবৈধ জাল দিয়ে দেদারসে মাছ শিকার করছে কিছু অসাধু জেলে। উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মকরমপুর, লালকোপরা, মহাজনটোলা, ঘাটনগর, দরবারপুর, কাওয়াভাষা, কালুপুর, দুর্গাপুর, আলমপুর ও কাশিয়াবাড়ি ঘাটে অবৈধভাবে সুতি, কচাল, রিং, কাপা ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে।

এছাড়াও ঘাটনগর,কালুপুর ও দুর্গাপুর ঘাটে প্রায় ২৪ বছর ধরে ঘের (কুমাড়) ফেলে জাল দিয়ে মাছ চাষ করছে। যাতে করে পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে নদীর পাড় ভেঙ্গে নদীর পাশে বসবাসরত দরিদ্র পরিবারগুলো গৃহহারা হচ্ছে। এছাড়াও নদীর অধিকাংশ স্থান ঘেরে দখল করার কারণে ছোট-বড় নৌকা চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এর কারণে প্রায়শই নৌকার মাঝিদের সাথে ঘের মালিকদের দ্বন্দ্ব চরমে।

সরেজমিনে বোয়ালিয়া ইউনিয়নের লক্ষীনারায়নপুর মহাজনটোলা ঘাটে গিয়ে দেখা যায় ,অসাধু জেলেরা কচাল জাল দিয়ে মাছ মারছে। নদীতে সুতিবার ফেলে রাখা আছে। যেই জালে পোনার ডিম পর্যন্ত ধরা পরে। লালকোপরা মৌজার অসাধু জেলে হোসেন,শহিদুল,আলম,আনন্দ,রফিক,কান্তু,গুতা,মাসিরুল,নুহু,আসরাফুল,অনিল ও সুনিলসহ অনেকেই প্রতিনিয়ত মাছ শিকার করছে ।

অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকারের বিষয়ে লালকোপরা মৌজার মৎস্যজীবী হোসেন আলীর সাথে কথা হলে। তিনি বলেন ,নেট ও কাপা জাল দিয়ে মাছ মারা অবৈধ সেটা আমরা জানি। আর সেটা মৎস্য অফিসেও জানে। তাদেরকে ম্যানেজ করেই আমরা মহানন্দা নদীতে মাছ মারছি।

উপর থেকে যখন চাপ আসে। অফিস থেকে খবর পাঠায় তখন কিছুদিন মাছ মারা বন্ধ রাখি। তারপর আবার মাছ মারতে নদীতে নেমে যায়। এখানে আমি শুধু নয় আরও১০/১২টি নৌকা দিনরাত মাছ মারে। তারা কাপা জাল দিয়ে মাছ মেরে মহানন্দা নদীর মাছের ডিমও উঠিয়ে নেয়। এটা অবশ্যই তারা মোটেও ঠিক করেনা, কিন্তু কে দেখার আছে।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু অবৈধ জাল দিয়ে মাছ মারছে, সেহেতু মৎস্য অফিসে তো কিছু দিতেই হবে। তাই প্রতি মাসে কিছু পরিমাণে মাছ ও টাকা দেয়া লাগে। কাকে দেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নাম বলতে রাজি হননি।

নদীতে চুক্তিভিত্তিক মাছ মারতে আসা লালকোপরা গ্রামের কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী মোমিন আলী বলেন, ভাই আমাদের কাছে তথ্য নিচ্ছেন। এটা ঠিক আছে, কিন্তু এমন কিছু করেন না যাতে আমার ক্ষতি হয়। আজকে এসেছি কালকে নাও আসতে পারি। কারণ আমরা যে পরিমাণ মাছ পাই। তার কিছুটা আমাদেরকে ভাগ দেয়া হয়। সেজন্য আমরা চুক্তিতে মাছ মারতে আসি।

স্থানীয় বাসিন্দা মোকিম আলী বলেন, আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বলতে পারি যে, জালগুলো দিয়ে তারা মাছ মারে এটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। আমার বাপ দাদাদের আমল থেকে শুনে এসেছি। এখন যে জালগুলো দিয়ে মাছ মারা হচ্ছে সেগুলো কয়েক বছর যদি না ফেলা হয় নদীতে।

তাহলে ভবিষ্যতে গামছা দিয়ে মাছ মেরে খেতে পারব আমরা। এটাতো আমাদের জন্য একটা বড় পাওনা। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আইন আছে কিন্তু আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ নাই। যদি আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ হয় তবে এমনটি করা সম্ভব।

নদীতে দিনের পর দিন অবৈধ জাল ও ঘের ফেলে মাছ শিকার করার বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ( অ: দা:) আলী হোসেন শামীমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে। তিনি বলেন, নদীতে অবৈধভাবে জাল দিয়ে মাছ মারা সম্পন্ন অবৈধ। এটা যদি কোন জেলেরা করে থাকে, তাহলে আমরা দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব। মৎস্য অফিসকে টাকা ও মাছ দিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এরকম অভিযোগ আমার কাছে নেই। আর কেও যদি সুনির্দিষ্ট করে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করব।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে নদীতে ঘের ফেলা ও অবৈধ জল দিয়ে মাছ শিকারের বিষয়ে একাধিকবার রিপোর্ট প্রকাশ করা হলেও মাইকিং প্রচার করে দায় সারার চেষ্টা করে উপজেলা মৎস অফিস গোমস্তাপুর। আর মৎস্য সপ্তাহে আসলে লোক দেখানো একটি মোবাইল কোড পরিচালনা করে কিছু জাল ধ্বংস করে দায় সারে।

পত্রিকা একাত্তর / ইয়াহিয়া খান

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news